নিজস্ব প্রতিবেদক: পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার পর আওয়ামী লীগ, দলীয় সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর যথাযথ ভূমিকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বিডি নিউজ
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি সেই দিনের ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেদিন বাংলাদেশে এটা ঠিক যে, এই রকম একটা ঘটনার পর আমাদের দল, সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধাদের যে ভূমিকা ছিল তা হয়তো তারা করতে পারেনি। কিন্তু এটা আপনারা জানেন যে, যখনই আক্রমণ শুরু হয় প্রথমে যেমন সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় বা শেখ মনির বাসায়, খবরটা আসার সঙ্গে সঙ্গে এবং আমাদের বাসায় যখন গুলি শুরু হয় বঙ্গবন্ধু কিন্তু সবাইকে ফোন করেছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয়, তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়, সেনা প্রধান শফিউল্লাহর সঙ্গে কথা হয় সেনাবাহিনীরও, যার যা ভূমিকা ছিল তারাও কিন্তু সঠিকভাবে করে নাই। এর পেছনে রহস্যটা কী সেটাই কথা।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
দুই যুগ পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। সেই বিচারের রায় এবং দণ্ডিত অধিকাংশের দণ্ডকার্যকর হলেও হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল বলে বরাবরই বলা হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে মহামারি শেষেই একটি কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
জাতির জনককে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসনে থেকে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরেন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ।
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা, মা, ভাইবোন সব হারিয়ে যেদিন বাংলার মাটিতে পা দিলাম, আমাকেও তো আসতে অনেক বাধা দিয়েছে। তারপরও জোর করে যখন আসলাম, হ্যাঁ, আমি সেই চেনামুখগুলো পাইনি। বরং দেশে এসে আমি খবর পেলাম। তখন আমি পেয়েছি লাখো মানুষ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের ভালোবাসা, তাদের আস্থা, বিশ্বাস। এজন্য আমি বলতে পারি আওয়ামী লীগ আমার পরিবার। তিনি বলেন আমার কোনো মৃত্যুভয়ও নেই, কোনো আশঙ্কাও নেই, কোনো চাওয়া পাওয়ারও কিছু নেই। আমার জন্য আমি কিছু করব? করতেও চাই না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকুই চাই যারা ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা ১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যা করেছে তাদের উদ্দেশ্য তো ছিল বাংলাদেশ ফেইল্ড রাষ্ট্র (ব্যর্থ রাষ্ট্র) হোক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনটা ব্যর্থ হোক, স্বাধীনতার আদর্শগুলো ধ্বংস হয়ে যাক সেটা করতে দেব না। যে নাম তারা মুছে ফেলেছিল, আজকে আল্লাহর রহমতে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখন আর কেউ তা মুছতে পারবে না।’
আদর্শ নিয়ে যদি একটা সংগঠন করা যায় তাহলে সেই সংগঠনই মানুষকে কিছু দিতে পারে উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজকে কভিডের সময়ে কারা মানুষের পাশে আছে? আর কত দল শুধু বিবৃতি, বক্তৃতাই দিয়ে যাচ্ছে। কারণ আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, প্রাইভেট টেলিভিশন করে দিয়েছি, প্রাইভেট রেডিও করে দিয়েছি। একটা অবাধ সুযোগ আছে সবার কথা বলার। কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু মাঠে কয়টা মানুষ আছে? মানুষের পাশে কে আছে? দুঃসময়ে কে দাঁড়াচ্ছে? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই দাঁড়াচ্ছে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবিরসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।