মনোরঞ্জন সরকার, পঞ্চগড় : দেশে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ও লাভজনক করে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে কৃষিপণ্য রপ্তানিমুখী করার লক্ষ্যে অপ্রচলিত কৃষিপণ্য বিশেষ করে কন্দাল ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করেছে কৃষি বিভাগ। পুষ্টিমান, ওষধ শিল্পের কাঁচামাল, বেকারি পণ্যের উপাদানসহ নানা পণ্য উৎপাদন শিল্পে ব্যবহƒত হওয়ায় পঞ্চগড়ে এ কৃষি পণ্য চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে এ জেলায় শুরু হয়েছে বিদেশি কন্দাল জাতীয় ফসল ‘কাসাভা’ আবাদ।
কৃষি বিভাগ জানায়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রথম বৃহৎ বাগান আকারে কাসাভা চাষ শুরু হয়েছে। বিদেশে জনপ্রিয় খাবার এবং দেশে খাদ্য ও ওষধ শিল্পে ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহার হওয়ায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে এ কাসাভার। পতিত ও অনুর্বর জমিতে রোগ-বালাইবিহীন সহজ চাষ পদ্ধতি এবং অধিক লাভের আশায় রপ্তানিযোগ্য এ ফসল চাষ করা হয়েছে পঞ্চগড়ে। কন্দাল ফসল চাষ বৃদ্ধির আওতায় কৃষি বিভাগের সার্বিক সহায়তায় অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কাসাভার আমদানিনির্ভরতা কমাতে ২০ বিঘা জমিতে বৃহৎ আকারের এ কাসাবা চাষ করা হয়েছে।
জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ট্রেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের চরতিস্তা পাড়া এলাকায় ২০ বিঘা জমিতে কাসাভা চাষ করেছের ওই এলাকার গোলাম মোস্তফা নামের এক কৃষক। অপেক্ষা কৃত অনুর্বর-পতিত জমিতে কাসাবা চাষ, সহজ পদ্ধতি, স্বল্প পরিচর্যা ও খরচ সর্বোপরি লাভ বেশি হওয়ায় এ কাসাভা চাষে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।
কাসাভা কন্দাল জাতীয় ফসল। এটি মাটির নিচে ফল ধরে, কাসাভা দেখতে মিষ্টি আলু বা শিকড়ের মতো লম্বা।
দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শাফিয়ার রহমান জানান. দেশ এখন পুষ্টিমান খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিকে বহুমুখী করণের মাধ্যমে রপ্তানিমুখী করতে অপ্রচলিত ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ ও লাভজনক করে কৃষকরা যাতে লাভবান হয়, তাই আমদানিনির্ভর এই কাসাভার সফল চাষে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি আশা নিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে, কাসাভা চাষে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
তিনি জানান, কন্দাল জাতীয় ফসলের মধ্যে কাসাভার চাহিদা অনেক বেশি। চাহিদা অনুযায়ী প্রতি বছর দেশে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন কাসাভা আমদানি করা হয়। চাহিদার মাত্র দুই ভাগ দেশে উৎপাদন হয়। আমদানি-নির্ভরতা কমাতে এবং দেশীয় শিল্পের চাহিদা মেটাতে দেশে কাসাভা চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দানাদার খাদ্য শস্য উৎপাদনে এগিয়ে গেছে দেশ। এখন পরিকল্পিতভাবে রপ্তানিযোগ্য অপ্রচলিত কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাড়ালে অব্যবহƒত জমির ব্যবহার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রপ্তানি বাণিজ্যে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।