নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশে। উত্তরণের পর যাতে বাংলাদেশ বড় ধরনের কোনো হুমকির সম্মুখীন না হয়, তা নিশ্চিত করতে একটি রূপান্তর কৌশল প্রণয়ন করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সেই কৌশল যাতে দেশের মূল পরিকল্পনা দলিল পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল ইআরডি আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা এমন পরামর্শ দেন। তারা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রেক্ষাপটে প্রণীতব্য নীতি ও কৌশল দেশের আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর লক্ষ্যে মসৃণ উত্তরণ-সংক্রান্ত কৌশলটিতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এবং বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন। এছাড়া সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। ফলে পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। জাতিসংঘের নিয়মানুসারে উত্তরণের প্রস্তুতকালে বাংলাদেশকে একটি স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি বা এসটিএস প্রণয়ন করতে হবে।
সম্প্রতি ইউএন ডেসার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজির খসড়া প্রস্তুতকরণের কাজ শুরু করেছে। এ অবস্থায় খসড়া প্রস্তুত করার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মতামত বিনিময়ের লক্ষ্যে ওই কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় বক্তব্যদানকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঠিক নীতি, পদ্ধতি ও কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে এদেশের কর্মঠ জনগণ, গতিশীল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জনবান্ধব সরকার।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর লক্ষ্যে ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি’ শীর্ষক নীতি-কৌশলটিতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের ওপর জোর দেয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি শীর্ষক কৌশলপত্রটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
ইআরডি সচিব তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটি দেশের নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করার আহ্বান জানান।
বাণিজ্য সচিব সেলিম উদ্দিন বলেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস তার বক্তৃতায় বলেন, জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত রূপান্তর ও পরিবেশগত মান সুনিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএইচএম জাহাঙ্গীর। কার্যকর বাস্তবায়নের স্বার্থে এসটিএসে উল্লিখিত বিভিন্ন কৌশল আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন বলে কর্মশালায় উপস্থিত বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় আসন্ন সময়ে প্রণীতব্য স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন এসটিএস-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক ড. এমএ রাজ্জাক। এছাড়া স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি সংশ্লিষ্ট কর্মপরিকল্পনার ওপর আলোকপাত করে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন এসটিএস-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পরামর্শক কুয়োং মিন গুয়েন। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা এবং বেসরকারি খাত, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কর্মশালায় অংশ নেন।
