নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি পণ্যকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সহজবোধ্য ভাষায় এবং মানবিক ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। গতকাল ঢাকায় ‘পিআর অ্যান্ড ব্র্যান্ড কমস সামিট, ২০১৯’ শীর্ষক প্রথম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ পরামর্শ দেন তিনি।
আতিউর বলেন, একটি পণ্যকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে হলে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নৈতিকতা। এই নৈতিকতা সংকটকালেও মানুষের কাছে ওই পণ্যের ভরসার জায়গা তৈরি করে। তার মতে, ব্র্যান্ডিং এমন হতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের নিজের জীবনের সঙ্গে ওই পণ্যকে নিজের মধ্যে অনুভব করেন।
গভর্নর থাকাকালের একটি ঘটনা তুলে ধরে আতিউর বলেন, ‘সিলেটের এক ব্রিটেন প্রবাসী একটি ব্যাংকে তিন লাখ টাকার এফডিআর করে আবার যুক্তরাজ্যে চলে যান। তিন বছর পরে তিনি এফডিআর ভাঙতে গিয়ে দেখেন তার টাকা নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি নিজেই ওই টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযোগ শোনার জন্য একটি সেবা চালু করেছিল। ওই লোক বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সেলে ফোন করে অভিযোগটি দায়ের করলে ঘটনাটি আমার কানে আসে। আমরা তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করে জানতে পারি ওই ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এবং সংশ্লিষ্ট ডেস্ক অফিসার মিলে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন। তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যবস্থাপকসহ দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে ওই লোকের টাকা ফেরত দিই।’
‘ওই লোকটা বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করার যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্র্যান্ডিং ইমেজের কারণে,’ বলেন তিনি। আতিউর বলেন, ‘পণ্যকে সামাজিক দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ করাও ব্র্যান্ডিংয়ের একটি বড় কাজ। ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে হবে যে এই পণ্যের লাভের একটা অংশ সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়। একটি পণ্য সামাজিক দায়বদ্ধতা যত কাঁধে নেবে, সাধারণ মানুষের কাছে সে ততই আস্থার জায়গা দখল করবে। বিরতিহীনভাবে যে পণ্য উত্তরোত্তর আস্থা তৈরি করতে পারে, সেই পণ্যের ততই ব্র্যান্ডিং ইমেজ বৃদ্ধি পায়।’
ড. আতিউর বলেন, ‘ডিজিটাল টেকনোলজি আমাদের দারুণ উপকার করেছে। ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। টেকনোলজির মাধ্যমে ডেটাবেজ তৈরি করে মানুষ এখন নানা তথ্য জানতে পারছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক বিজনেসের একটি পাবলিক ব্র্যান্ড আছে। ব্র্যান্ডটি মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে, আর এ জন্য কাজ করছে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডররা।’
আতিউর রহমান বলেন, ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরকে সব সময় মানবিক হতে হবে। যারা গরিব-অবহেলিত মানুষ ও মূল্যবোধের কথা বলে, তারাই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তারা সমাজ পরিবর্তনের কাজ করছে।’ মানুষের মধ্যে তারা ভরসার জায়গা তৈরি করছে বলেও তিনি জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘স্টক মার্কেট ভালো করতে হলে লং টার্ম বিনিয়োগে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটি প্রতিদিনের মার্কেট নয়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন।’
সামিটের আয়োজক র’দিয়া ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ রবিউস সামস জানান, ‘প্রতি বছর সামিটটি অনুষ্ঠিত হবে। এটি মিড-লেভেল এবং তরুণ পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, ফ্রেশার এবং পিআর ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আগ্রহীদের জন্য আদর্শ সুযোগ। সামিটটিতে অংশগ্রহণকারীরা ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেটর, ডোমেন এক্সপার্ট এবং রিয়েল-লাইফ এডুকেটরদের কাছ থেকে একটি ইন্টারেক্টিভ পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম পান, যেখানে সেশনগুলো গণযোগাযোগ, বিজ্ঞাপন এবং ব্র্যান্ডিং ইকোসিস্টেমের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে। একইসঙ্গে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বড় নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সি ২০০ আগ্রহী দিনব্যাপী সম্মেলনটিতে অংশগ্রহণ করেন।
জনসংযোগ এবং ব্র্যান্ডের উৎকর্ষে কেআইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেঞ্চমার্ক পিআরের পরিচালক এএফএম আসাদুজ্জামান।