শেয়ার বিজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নির্ধারিত সময়ে পণ্য নামাতে না পেরে বাধ্য হয়ে পণ্যবাহী জাহাজ মোংলা বন্দরে চলে যাচ্ছে। ছোট জাহাজ সংকটের কারণে আমদানি পণ্য জাহাজ থেকে নামাতে পাঁচ দিনের বদলে লাগছে এক মাস বা তারও বেশি সময়। এই বাড়তি সময় বসে থেকে বিপুল আর্থিক ক্ষতি এড়াতে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দরে গিয়ে পণ্য নামাচ্ছেন। এতে পণ্য পরিবহনে বাড়তি ব্যয়ের কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খবর কালের কণ্ঠ।
জাহাজ মোংলা বন্দরে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুলতান শিপিংয়ের কর্ণধার শামছুজ্জামান রাসেল জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরে সাগরে পণ্য নামাতে না পেরে একটি জাহাজকে এক মাস সময়ও অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে। এ সংকটের আপাতত কোনো সমাধানও দেখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে চারটি জাহাজে দেড় লাখ টন পণ্য মোংলায় খালাস করছেন। এসব জাহাজে সার ও গম রয়েছে। এর বেশিরভাগ চট্টগ্রামে নামানোর কথা ছিল। তিনি জানান, একটি জাহাজ নিয়ে অনির্দিষ্টকাল বসে থাকার চেয়ে মোংলায় ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে গিয়ে পণ্য নামানো হচ্ছে। এতে লাভ না হলেও জাহাজের দৈনিক ব্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া পণ্যগুলো আমদানিকারকের গুদামে পৌঁছছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অন্তত ৫০টি জাহাজে পণ্য আছে; যেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্য নামানোর মাঝপথে রয়েছে। এসব জাহাজে গম, ভুট্টা, ছোলা, সার, লবণ, চিনি, সয়াবিন, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ অনেক পণ্য রয়েছে। আমদানিকারকরা জানান, বড় জাহাজ পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই বন্দরের বহির্নোঙরে সাগরে ও কুতুবদিয়া এলাকার গভীর সাগরে দাঁড়িয়ে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য নামিয়ে সেগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে নেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর ধরে ছোট জাহাজের সংকট থাকায় জাহাজগুলো পণ্য নামাতে না পেরে মাসের পর মাস অলস বসে থাকে। এখনও সেটি অব্যাহত রয়েছে। ছোট জাহাজ বুকিং প্রদানকারী সংস্থার হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিদিন বার্থিং মিটিং বসে জাহাজ বুকিং দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসের ৩০ দিনে মিটিং বসেছে মাত্র ১৫টি। ছোট জাহাজ খালি না থাকায় বাকি ১৫ দিন কোনো মিটিং বসেনি। কেন এমন অবস্থা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম লাইটার জাহাজ ঠিকাদার সমিতির সভাপতি শফিক আহমদ জানান, ছোট জাহাজগুলোকে সাগরে ভাসমান গুদাম বানিয়ে রেখেছেন শীর্ষ পর্যায়ের কিছু আমদানিকারক। তারা নির্দিষ্ট সময়ে জাহাজ ছেড়ে না দেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। আর রহস্যজনক কারণে নতুন জাহাজ তৈরিও বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। জানা গেছে, ৪৯ হাজার টন গমবাহী একটি জাহাজ গত ১৩ অক্টোবর বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। স্বাভাবিকভাবে কাজ চললে ১২ দিনে জাহাজ থেকে পণ্য নামানো সম্ভব। কিন্তু সময়মতো ছোট জাহাজ না পাওয়ায় জাহাজটি থেকে সব পণ্য নামাতে সময় লেগেছে ৪৫ দিন। ফলে বাকি ৩৩ দিন জাহাজকে সাগরে অলস বসে থাকতে হয়েছে। জাহাজটির হ্যান্ডলিং কাজে নিয়োজিত অপারেটর কেএম এজেন্সির কর্ণধার মশিউল আলম স্বপন জানান, বাড়তি সময় বসে থাকার ডেমারেজ বাবদ আর্থিক ক্ষতি যোগ হয়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া এত বেশি সময় অলস বসে থাকতে হচ্ছে বলে বিদেশি জাহাজ মালিকরা জাহাজ ভাড়া দিতে বেশি মাশুল চাইছেন।
শিপিং এজেন্টরা জানান, বিদেশিরা জাহাজ ভাড়া দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেন। এর বেশি হলে তারা প্রতিদিন ডেমারেজ বাবদ মাশুল আদায় করেন। জাহাজভেদে এ মাশুল দিনে আট থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। আর এ মাশুল শেষ পর্যন্ত পণ্যের দামের সঙ্গে যোগ হয়ে দাম বেড়ে যায়। ভোক্তাদের বেশি দামে এ পণ্য কিনতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম চেম্বারের বন্দর ও কাস্টমসবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজুল হক শাহ জানান, খুশিমনে কেউ মোংলায় গিয়ে পণ্য নামাচ্ছে না। একান্তই বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে সেটিকে তারা বেছে নিচ্ছে।