নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই জানিয়েছে, বাজারে পণ্য সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। মূল্যও সহনীয় পর্যায়ে। স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে বাজার মনিটরিংও করবে সংগঠনটি। এজন্য ৪৬ সদস্যের কমিটিও করা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় নয়। গতকাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে।
মতবিনিময় সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি এখন আর উত্তপ্ত নয়। অনেক পণ্যের মূল্য কমেছে। মৌসুমি পণ্যগুলোর মূল্য সহনীয়। রোজার মাসেও যেন সহনীয় থাকে সে জন্য আজকের মিটিং।’
তিনি বলেন, ‘আমি অসাধুদের সভাপতি না। আমি ব্যবসায়ীদের সভাপতি। আমি অসাধুদের বদনাম নিতে পারব না। অসাধুদের ধরিয়ে দিন। যারা অসাধু তাদের শাস্তি পেতে হবে। তাদের দায়িত্ব আমি নেব না।’
রোজার পরও মনিটরিং অব্যাহত থাকবে জানিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভোজ্যতেলের ফিনিশ গুডসে প্রায় ৬০ শতাংশ ডিউটি। এটা কমিয়ে ৩০ কিংবা ২০ শতাংশ ডিউটি নির্ধারণ করা হলে আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়বে। এতে তেলের মূল্য কমবে। সরকারের রাজস্বও কমবে না।’
তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় ১৭ হাজার জাহাজ আছে। আমাদের আছে মাত্র ৭০। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মাত্র ৪টি। এটা আমাদের একটা বড় খাত হতে পারে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের নিজস্ব জাহাজ লাগবে। ইনটেনসিভ দিতে হবে এ খাতে।’
তিনি বলেন, ‘এনবিআর ২০০ শতাংশ জরিমানা করছে। এর ওপর তারা ২০ শতাংশ ইনসেনটিভ পাচ্ছে। আমরা এগুলোর সমাধান চাই।’
বাজার মনিটরিং কীভাবে করা হবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব সরবরাহ ঠিক আছে কি না। নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কি না। অনিয়ম করা হচ্ছে কি না।’ এ সময় তিনি আলু ও রসুনের দামের পতনের কথা উল্লেখ করেন।
ক্যাবের প্রতিনিধি কাজী আবদুল হান্নান বলেন, ‘২০১১ সালের নিত্যপণ্য সরবরাহ আইনে সাপ্পাই অর্ডারের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, আইনটি প্রয়োগ করা হোক। সেটি প্রয়োগের বলে রাতারাতি তেলের মূল্য কমেছে।’
পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে এত মূল্য ফারাকের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ট্যাক্স কালেক্টরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাইকারি বাজার থেকে কিনে খুচরা বাজারে পণ্য নেয়ার সময় টোল আদায় করা হচ্ছে। গুপ্ত চাঁদাবাজি হচ্ছে। ট্রাফিক ডিউটিতে আসার সময়ই তাদের একটা টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটার চাপ পণ্যের মূল্যের ওপর পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার রমজানের জন্য ৪৬টি পণ্যের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজারে সেই পণ্যগুলোর মূল্য সংবলিত বোর্ড টানিয়ে দেয়া হোক। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’
পরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে পুলিশের আইজিকে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বৈঠক করা হবে।’
সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য না বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন।
সভা পরিচালনা করেন মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ পাইকারি গরম মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ, ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সবাপতি মফিজুল হক, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
৪৬ সদস্যের বাজার মনিটরিং কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন খানকে।
সভায় জানানো হয়, এ কমিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণসামগ্রীর বাজারদর, সরবরাহ পরিস্থিতি, উৎপাদন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারদর সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করবে। প্রয়োজনে সরেজমিন বাজার পরিদর্শন করবে। অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেলে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে সভার আয়োজন করবে। বাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করবে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সব পদক্ষেপে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।