Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:34 pm

পণ্যের ডেটাবেজ না থাকায় ট্যারিফ নির্ধারণে জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: দেশে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, আমদানি ও রপ্তানির সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় শুল্কনীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ এবং ট্যারিফ নির্ধারণে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে উৎপাদক ও আমদানিকারকের কাছেও সঠিক তথ্য না থাকায় সংশ্লিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করে লোকসানের শঙ্কা থাকে। অনেক সময় উদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। এছাড়া এখন পর্যন্ত শুল্কনীতি প্রণয়ন করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন পাঁচ বছর আগে শুল্কনীতির খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

গতকাল চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে দেশি শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা এবং শুল্কসংক্রান্ত সহায়তার বিষয়ে মতবিনিময় ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে ট্যারিফ কমিশন ও চট্টগ্রাম চেম্বার। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ট্যারিফ কমিশন চেয়ারম্যান তপন কান্তি ঘোষ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রামের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, কাস্টম হাউস কমিশনার এম ফখরুল আলম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু হাসান।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের মতো রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে দক্ষ জনশক্তি দরকার আমাদের। কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে হবে। শুধু পোশাকশিল্প-নির্ভর না হয়ে আইসিটি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। তিনি বলেন, আগামী ১০ বছর পর পোশাক খাতে সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যাবে না। তৈরি পোশাকে আমাদের বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। তারা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে শূন্য ট্যারিফ সুবিধা পায়, তাহলে আমাদের অনেক পণ্যের রপ্তানিতে কঠিন সমস্যা হতে পারে। দেশে ৩৭টির মতো রপ্তানি পণ্য নগদ সহায়তার আওতায় রয়েছে। এটা টেকসই পদ্ধতি নয়। উদ্যোক্তাদের এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ব্যবসা দাঁড় করানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রপ্তানি বাড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কঠিন বিষয় ও নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতার জায়গা। ব্যবসায় বৈধ কাগজপত্র, নানা সার্টিফিকেশন, মানবিকতা, মানবাধিকার, শ্রমিকদের অধিকার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হয়। বিদেশিরা এসে নথিপত্র দেখতে পারে। এজন্য সব বিষয়ে ব্যবসায়ীকে সচেতন হতে হবে।

কাস্টম হাউসের কমিশনার এম ফখরুল আলম বলেন, দেশি শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারি দপ্তরগুলো কাজ করছে। যদিও লিখিতভাবে শুল্কনীতি নেই। তবে তাতঁনীতি আছে, বস্ত্রনীতি প্রভৃতি আছে। এছাড়া ট্যারিফ শিডিউল, এসআরও ও অন্যান্য ডিউটি কাঠামোর ভিত্তিতে শুল্কহার নির্ধারিত হচ্ছে। যারা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমদানি করেন, তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ছয়টি শুল্কহার নীতি আছে। এর মধ্যে শূন্যহার, এক শতাংশ, পাঁচ, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ। মৌলিক মূলধনি যন্ত্রপাতিতে শুল্ক শূন্য থেকে ১ শতাংশ। আবার প্রয়োজনবোধে কোনোটিতে ২৫ শতাংশের সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা সেল আছে। গবেষণার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়নে সরকারকে সুপারিশ করে।

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের ডেটাবেজ খুবই জরুরি। কত গম, চিনি, তেল, ছোলা ইত্যাদি লাগবে সেই ডেটা নেই। কোনো পণ অতিরিক্ত আমদানি হচ্ছে। আবার কোনোটির আমদানি হচ্ছে চাহিদা অনুপাতে কম। আবার অনেক ব্যবসায়ী ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে জানেন না। এ কমিশন এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ দেয়। তাই ব্যবসায়ীদের এ কমিশনের কাছে যেতে হবে। তিনি বলেন, ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট ধারণা নেই। আর ভ্যাট অফিসারদেরও নেই। এ ঘাটতি দূর করতে ভ্যাট মেলা আয়োজন করা উচিত।

সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন মাহমুদুল হাসান। একই অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন চেম্বার পরিচালক সৈয়দ জামাল আহমেদ, অঞ্জন শেখর দাশ, বিএনও ও পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ, জসীম আহমেদ, চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহিউদ্দিন, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সচিব এম সলিমুল্লাহসহ অন্যরা।