Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:58 pm

পণ্য আমদানির খরচ কমানোর উদ্যোগ নিন

ব্যবসা সহজীকরণে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর একটি হলো পাঁচ বছরের আমদানি-রপ্তানি সনদ একেবারেই নেয়া যাবে। গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করে। তাতে বলা হয় ব্যবসা সহজ করার উদ্দেশ্যে আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) নবায়নের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, এত দিন আইআরসি ও ইআরসির মেয়াদ ছিল এক বছরের, মেয়াদ বাড়িয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সনদ নিতে পারবেন এখন। ওই সময় ব্যবসায়ীরা নতুন পরিপত্রকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এতে ব্যবসার গতি বাড়বে, ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমবে।

পরিপত্র জারির এক বছর পূর্তি হতে চলেছে। এই এক বছরে ব্যবসায়ীদের হয়রানি কতটা কমেছে, পরিপত্রে কতটা উপকৃত হয়েছেন তারা; ব্যবসা কতটা গতিশীল হয়েছেÑতারাই ভালো জানেন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের চেয়ে অন্যরা এ বিষয়ে কম জানবেন, যারা আমদানি বাণিজ্যে জড়িত নন। কিন্তু গতকাল শেয়ার বিজে ‘৫ লাখ টাকার পণ্য আমদানির খরচই সাড়ে ৩ লাখ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে আমরাও কিছু ধারণা করতে পারি। রোববার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের (বিটিএফ) জ্যেষ্ঠ কারিগরি উপদেষ্টা বলেছেন, পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এক চালান পটেটো চিপস আমদানিকারকের গুদামে যেতে যেতে দাম পড়ে ৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা; যা প্রকৃত মূল্যের ৬২ শতাংশ বেশি। প্রতিটি চালানেই নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই ও পরমাণু শক্তি কমিশনের ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়, তাতে সময় লাগে আট থেকে নয় দিন। বন্দরের ফি হিসেবে গুনতে হয় আরও এক লাখ টাকা। এসব তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, পণ্যের ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় এ খরচ ও সময় অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

কোনো পণ্য আমদানির খরচ দাম যদি প্রকৃত মূল্যের ৬২ শতাংশ বেশি হয়ে যায়, আমদানিকারক মুনাফা করবেন কত! পণ্যের ভোক্তাকেই ওই খরচ জোগাতে হবে। তাই আমরা মনে করি, আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনতে পন্থা খুঁজে বের করতে হবে। সরকার ঢাকার পূর্বাচলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানে পণ্য পরীক্ষা করে সরাসরি কার্গোতে পাঠানো যাবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ অপচয়Ñদুটিই কমে আসবে। তখন দেশের ভোক্তারাও যৌক্তিক ও ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারবে। সরকারের উচিত হবে আমদানি ও রপ্তানিতে সময়ক্ষেপণের মাত্রা কমিয়ে আনার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি লাভবান ও প্রতিযোগিতামূলক হয়। কর-ব্যবস্থাকে সহজীকরণ করার পাশাপাশি কাস্টমস বিভাগের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্রপ্রাপ্তি সহজীকরণ ও অনানুষ্ঠানিক আর্থিক লেনদেন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।