শেখ আবু তালেব: দেশের অর্থনীতির একটি অংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (এসএমই) দখলে। কর্মসংস্থান ও স্থানীয় চাহিদার পণ্য উৎপাদনে খাতটির অবদান সবচেয়ে বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা মহামারি চলাকালে খাতটির কর্মীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনা মহামারি দীর্ঘায়িত হলে এ খাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা বড় ধরনের সংকটে পড়বেন। এমন পরিস্থিতিতে করোনা-পরবর্তী সময়ে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখতে সরকারের কাছে বিশেষ সুবিধার দাবি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ঠিক রাখতে এ সময়ে নগদ অর্থের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এটি সরকার ও প্রতিষ্ঠান মালিককে যৌথভাবে করতে হবে। এমন মতামত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯-এর কারণে এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধস নেমেছে। দেশেও স্থবির হয়ে পড়েছে প্রায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাÐ। কিছু বড় শিল্পকারখানা চালু থাকলেও বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের এসএমই প্রতিষ্ঠান। কিছু প্রতিষ্ঠান মার্চ মাসের বেতন দিয়ে কর্মচারীদের ছুটিতে পাঠিয়েছে। কারখানা চালু না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছুটিতেই থাকতে হবে। এ সময়ে কোনো প্রতিষ্ঠানই তাদের বেতন দেবে না।
ব্যাবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) তথ্যমতে, সারা দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি। আর এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে সিএসএমই উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৭৮ লাখ। এ হিসাবে উদ্যোক্তাদের সিংহভাগই এ খাতের।
অন্যদিকে জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বিসিক শিল্পনগরীতে এসএমই খাতে শ্রমিক-কর্মচারী মিলিয়ে আট লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সব মিলিয়ে ২৫ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। এছাড়া সেবা খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের তথ্য হিসাবে আসে না। অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সেবা খাতের তথ্য হিসাবে আনলে অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ৮৭ শতাংশ দাঁড়াবে।
ব্যাবসায়ীদের প্রণোদনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এসএমই খাতের উদ্যোক্তরা ২০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধন নিতে পারবেন চার শতাংশ সুদে।
এ বিষয়ে এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলি জামান শেয়ার বিজকে বলেন, করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন বাবসায়ীদের জন্য। এর মধ্যে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কম সুদে চলতি মূলধন নেওয়ার সুযোগ অন্যতম। কিন্তু এ ঋণ তো পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু করোনা মহামারি চলাকালে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বেতন পাবে না। এখন তাদের দেখার কেউ নেই। কতদিন তারা বাসায় বসে থাকবে? তাদের খাবারের জোগাড় যদি সরকার করে, তাহলে উপকৃত হবে খাতটি।
এ বিষয়ে নাসিবের প্রেসিডেন্ট মির্জা নূরুল গণী শোভন বলেন, এসএমই খাতে ২৫ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। সারা দেশের জেলা পর্যায়ে থাকা প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কোনো কর্মী যেন কষ্টে না থাকে। আমরা মার্চ মাসের বেতন দিয়েই ছুটি দিয়েছি সবাইকে, যা বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো করেনি। এপ্রিল মাসের বেতন দেওয়ারও পরিকল্পনা করছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ খাতের ওপর অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভরশীল। তাদের সহায়তা না করতে পারলে ভেঙে পড়বে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও সামাজিক পরিকাঠামো। কারখানা সচল না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা দিতে হবে, নইলে কর্মহীন মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না। কাজ না পেয়ে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড জড়িয়ে পড়বে তারা। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
এসএমই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানিয়েছেন, করোনা-পরবর্তী উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণে এখনই ভাবতে হবে। অর্থনীতি সচল করতে বন্ধ থাকা শিল্পকারখনা চালু করতে হবে। উৎপাদিত পণ্যর মূল্য কমাতে সব পর্যায়ে ভ্যাট বাতিল করা প্রয়োজন। এতে পণ্যর দাম কমবে। তারা জানান, এ সময়ে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা এমনিতেই তুলনামূলকভাবে কমবে। তাই ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট মওকুফ করা প্রয়োজন। তাহলে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকবে। কর্মসংস্থানেও বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না।