নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে প্রথমবারের মতো ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে বিনিময়যোগ্য যেকোনো পণ্য হাতবদল করতে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট চালু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (সিএসই)। মার্কেট প্লেসটি চালু করতে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে এমসিএক্স। এজন্য গতকাল একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
প্রসঙ্গত, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট হলো একটি মার্কেটপ্লেস; যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতারা নিয়ম মেনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে একজন ভুট্টাচাষি ফসল কাটার কয়েক মাস আগে তার মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। এটি তিনি বিক্রয় করবেন এই প্ল্যাটফর্মে। পণ্য বুঝে নেয়ার সময় ওই চুক্তিপত্রটি যার কাছে, কৃষক তাকেই পণ্য বুঝিয়ে দেবেন। এর মাধ্যমে পণ্যও গুণগত মান, পরিমাণ ও দরের ওপর তদারকি করতে পারবে সরকারি সংস্থা। দেশীয় পণ্য ও পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যও ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। ফলে পণ্য পরিবহন, ব্যবস্থাপনা ও গুদামজাত প্রক্রিয়ায় নতুন পরিবর্তন আসবে।
এজন্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট চালু করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে ভারতের কোম্পানি মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এমসিএক্স)। সিএসইর পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম ফারুক ও এমসিএক্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও পিএস রেডি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমি তো বিপদের মধ্যে আছি বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ভোক্তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি। আবার ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বলছেন, লাভ করতে পারছেন না। আমি আশা করছি, এই মার্কেট চালু হলে স্বস্তি দেবে। আমাদের দেশে পণ্যের উৎপাদক ও বিপণনে একটি তরল বাজার রয়েছে। মার্কেটপ্লেসটি চালু হলে মানসম্মত লেনদেন এটি ভূমিকা রাখবে। ক্রেতা-বিক্রেতারা দাম পাবেন। পণ্যের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যাবে। এটি ক্ষুদ্র কৃষকদের দাম ও মান নিশ্চিত করতে পারবে। কৃষকের মূল্য ঝুঁকির বিষয়টি চিহ্নিত করবে। তাদের সক্ষমতা বাড়বে।’
এ সময় ঢাকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোড়াইস্বামী বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জ খুবই উপকারী। এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও লাভজনক। এতে কৃষক পর্যায়ে উপকৃত হবে। উৎপাদনশীল পর্যায়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থনীতির উন্নয়ন বিশেষ করে সাপ্লাই চেইন উন্নয়নে এ প্ল্যাটফর্ম ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, এ প্ল্যাটফর্ম দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে আরও কিছু দিকের উšে§াচন করবে।’
বিএসইসি চেয়্যারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেটটি কিন্তু বহু পুরোনো। অনেক আগেই এশিয়ার এ অঞ্চলে এটি ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক সূচকেই ভালো করছে। আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই। ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্যের দাম সঠিকভাবে নির্ধারণ হবে। এটি ক্রেতা ও বিক্রেতাকে সহযোগিতা করবে। পণ্য সহজেই খুঁজে নেয়া যাবে। একটি নতুন দিগন্তের উম্মোচন করবে।’
বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ভোগ সক্ষমতা বেড়েছে। যদিও বর্তমানে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে লেনদেন করার মতো উপকরণ খুব একটা বেশি নেই। কিন্তু এটি সম্ভাবনাময়। খাদ্য খাতের সাপ্লাই চেইনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘কমোডিটি মার্কেট দেশের অর্থনীতি ও উৎপাদকদের উন্নয়নে কাজ করবে। আমরা এটি চালু করতে যাচ্ছি। এটি শুরু মাত্র। সময়ের আলোকে এর ব্যাপ্তি বাড়বে। এজন্য সহযোগিতা করতে সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’