শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্বের জ্বালানি ও পণ্যবাজারে অর্ধ শতকের মধ্যে ‘সবচেয়ে বড় মন্দা’ লাগতে যাচ্ছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। খবর: বিবিসি।
যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য, উৎপাদন ও ভোক্তাব্যয়ে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এসেছে বলে জানায় সংস্থা। তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যুদ্ধের কারণে তেল, গ্যাস, গম, তুলা প্রভৃতির পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এই ধাক্কা ১৯৭০-এর দশকের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনের সহ-লেখক পিটার ন্যাগল বলেন, পণ্যের দামের এই ঊর্ধ্বগতি এরই মধ্যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও মানবিক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষকে জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় বহনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা গরিব পরিবারগুলোর জন্য বেশি উদ্বিগ্ন, যেহেতু তাদের আয়ের সিংহভাগ খাবার ও জ্বালানির পেছনে খরচ হয়। পণ্যের দাম বাড়লে তারাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েন।
বিশ্বব্যাংক জানায়, জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ার দিকে এগোচ্ছে, যা ব্যবসা ও সংসার চালানোর খরচ বেশ বাড়িয়ে দেবে। সবচেয়ে বেশি বাড়বে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম, যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে গত বছরের তুলনায় গ্যাসের দাম ১৫ শতাংশ বেশি থাকবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত বিশ্ব টানা ২৩ মাস জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি দেখছে, যা মধ্যপ্রাচ্য সংকটের জেরে ১৯৭৩ সালের জ্বালানির দাম বাড়ার পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়। একইভাবে জ্বালানি তেলের দামও ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়তি থাকবে এবং চলতি বছরজুড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম গড়ে ১০০ ডলারে বিক্রি হবে, যা বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভ‚মিকা রাখবে। রাশিয়া বিশ্বের ১১ শতাংশ তেল উৎপাদন করে, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটনায় ও পশ্চিমা অবরোধের ফলে একটি দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে, যেহেতু অবরোধের কারণে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো রাশিয়া ছেড়ে যাবে এবং দেশটির প্রযুক্তিগত সুযোগ কমে আসবে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ২৭ শতাংশ তেল সরবরাহ করে। কিন্তু ইইউ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে, যা বিশ্বজুড়ে তেল-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছে, অনেক খাদ্যপণ্যের দাম হঠাৎ লাফিয়ে বাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ছয় দশক আগে চালু করা জাতিসংঘের খাদ্য মূল্য সূচক এরই মধ্যে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গমের দাম ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়তে পারে এবং ডলারের হিসাবে এটা দাম বাড়ার নতুন রেকর্ড গড়ার পথে রয়েছে। অন্যান্য খাদ্যপণ্যের মধ্যে বার্লি ৩৩ দশমিক ৩, সয়াবিন ২০, ভোজ্যতেল ২৯ দশমিক ৮ ও মুরগির দাম ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে। এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যানের হিসাবে, যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্বে গম রপ্তানির ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ করত এই দুই দেশ। এসঅ্যান্ডপি’র মতে, বিশ্বের মোট সয়াবিনের ৬০ শতাংশের জোগানদাতা ছিল তারা।
এছাড়া সার, বিভিন্ন ধাতু ও খনিজ দ্রব্যের মতো কাঁচামালের দামও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পূর্বাভাসে। তবে কাঠ, চা ও চালের মতো কয়েকটি পণ্যের দাম কমতে পারে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ থাকবে, ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকার সময়সীমাও বাড়তে থাকবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক।