পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক

দেশের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি একটি ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির মাত্রা একটু বেশি বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে তারা বিভিন্ন ফোরামে অভিযোগ করে আসছেন। এমনকি চাঁদাবাজি নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে নানা সময় বৈঠক করেও সমস্যার সুরাহা করা যায়নি। বর্তমানে দেশে একপ্রকার অসহনীয় মূল্যস্ফীতি চলমান রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমাতে একপ্রকার গলদঘর্ম হতে হচ্ছে সরকারকে। এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘পণ্য পরিবহনে চাঁদা বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি সহনীয় হবে: বিসিআই’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে পণ্যমূল্য হ্রাস করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি সব থেকে বেশি। এর অন্যতম কারণ পণ্য পরিবহনে বিভিন্নভাবে চাঁদা আদায়। চাঁদা বন্ধ করা গেলে পণ্যের মূল্য অনেকটাই কমে আসবে বলে বিশ্বাস করেন ব্যভসায়ীরা। এক্ষেত্রে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়ে গণমাধ্যমে নানা সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওইসব প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির সঙ্গে যাদের সংযোগ উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সরকার সমর্থক রাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও সেগুলোর প্রভাবশালী সদস্যরা, পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি, পরিবহন মালিক সমিতির নামে চাঁদাবাজি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। আইন পরিবহন পরিচালনায় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। সে কারণেই ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

পণ্য পরিবহন মূলত লজিস্টিক সেবার অন্তর্ভুক্ত। কোনো দেশে ব্যবসা করার সূচকে পণ্য পরিবহন ব্যয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়। যে দেশে পণ্য পরিবহন ব্যয় যত কম সে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। যদিও বিদেশি বিনিয়োগ আরও অনেকগুলো সূচকের ওপর নির্ভর করে। তবে পণ্য পরিবহন ব্যয় এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। ভারতে বাংলাদেশের তুলনায় পণ্য পরিবহন ব্যয় প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। এক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থার দক্ষতা এবং সড়ক ও রেল অবকাঠামোর পর্যাপ্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশেও সড়ক ও রেল যোগাযোগের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও পরিবহন ব্যয় আশানুরূপ কমছে না। এর অন্যতম কারণ সড়কে মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজি ও হয়রানি। এক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার যদি অগ্রগতি সাধন করা না যায়, তাহলে প্রশস্ত সড়ক ও উন্নত রেল অবকাঠামো নির্মাণের সুফল পাওয়া যাবে না। ডাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হলেও চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ থেকে যথাযথ সুফল মিলছে না। তাই মূল্যস্ফীতি কমানো, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ব্যবসা সহজিকরণের জন্য চাঁদাবাজি রোধ করা একান্ত আবশ্যক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষে নেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০