পণ্য মজুতের জায়গা বা গুদামের সঠিক ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেক সময় কারখানার নানা বিষয়ে গুরুত্ব দিলেও পণ্য মজুতের জায়গাটিকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব দিই। গুদাম যদি যথাযথ ব্যবস্থাপনায় না থাকে, তাহলে একদিকে তা পণ্যের গুণগত মানের ওপর প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে পণ্য ও গুদাম উভয়ই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রাজধানীর ইসলামবাগ এলাকায় প্লাস্টিক গুদামে আগুন লেগে তিনজন মারা গেছেন বলে এক প্রতিবেদন গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে। এতে গুদামের পণ্য তো নষ্ট হয়েছেই, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুদামসংলগ্ন বসতবাড়ি।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য গুদাম কোথায় স্থাপন করা উচিত, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে প্লাস্টিকের মতো দাহ্য পদার্থের গুদাম স্থাপনে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করতে হয়। আবাসিক স্থানে প্লাস্টিক গুদাম কীভাবে স্থাপিত হলো দুর্ঘটনার পর সে প্রশ্ন জোরালোভাবে ওঠা উচিত। আদৌ কি সেটি গুদাম হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল, না কি বাসাবাড়ির কক্ষকেই গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল তা জানা দরকার। অর্থাৎ নিয়মকানুনের বিষয়টি তদন্তে মুখ্য হওয়া উচিত। সব নিয়মকানুন মানার পর কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে বা ঘটবে না এমনটি অবশ্য দাবি করা যায় না; কিন্তু এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়। পুরান ঢাকায় প্রতি বছরই একাধিক দুর্ঘটনায় জীবনহানি হচ্ছে; কিন্তু এতে কারও টনক নড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। এই যে প্রতিনিয়ত আইন অমান্যের প্রতিযোগিতা চলছে, এতে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার বড় কোনো ঘটনাও আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। উদাহরণ থাকলে হয়তো এ-ধরনের ঘটনা কমে আসতো।
পুরান ঢাকার প্রতিটি এলাকাই ঘনবসতিপূর্ণ। ফলে সেখানে কোনো ধরনের কারখানা স্থাপনের আগে একাধিকবার চিন্তা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি রাসায়নিক পদার্থ বা দাহ্য বস্তুর সরাসরি সংস্পর্শ রয়েছে এমন কারখানা স্থাপনে অনুমোদন দেওয়া অবশ্যই উচিত নয়। এ-ধরনের যত কারখানা রয়েছে, সেগুলোকে পুরান ঢাকা থেকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া উচিত। ট্যানারি শিল্প যেমন সরিয়ে সাভারে নেওয়া হচ্ছে, তেমনি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য হলেও এসব কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। কাঠামোগত কারণে পুরান ঢাকা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানে কী হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তিত নগর পরিকল্পনাবিদরা। সেখানে আগুন লাগা ভূমিকম্পের চেয়েও মারাত্মক দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে। রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক ইত্যাদি দাহ্য পদার্থের গুদাম রাখার প্রশ্ন আসাই উচিত নয়। এক্ষেত্রে কারখানা মালিকের পাশাপাশি যে বাড়ির মালিক ভাড়া দিচ্ছেন, উভয়কেই আইনের আওতায় আনা জরুরি। পণ্য মজুতের সব নিয়মকানুন মেনে গুদাম স্থাপন এবং মজুতের জায়গাটি সুরক্ষিত হোক সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
Add Comment