Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 9:57 am

পণ্য-সেবার সম্মিলিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৪১ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার। এ হিসেবে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়া সেবা খাতে আরও ৩৫০ কোটি ডলার রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪১ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। যদিও গত অর্থবছর রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ বিলিয়ন, যার মধ্যে অর্জন হয়েছে ৩৪ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন। অবশ্য সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছিল গত অর্থবছরে। সেবা খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই ২৮৬ কোটি ডলার (দুই দশমিক ৮৬ বিলিয়ন)। অর্থবছরের ১১ মাসে (মে মাস পর্যন্ত) সেবা খাতের রফতানি আয় হয় ২৮৯ কোটি ডলার। তবে সেবা ও পণ্যের সম্মিলিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ দশমিক ৩৫ শতাংশ অর্জিত হয়নি গত অর্থবছরে। সর্বমোট ৪০ বিলিয়ন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রফতানি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।

গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পণ্য ও সেবার সমন্বিত করে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৫৪ ভাগ আসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে। গত বছর ইউরো ও পাউন্ডের অবমূল্যায়নের কারণে রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও রফতানি আয় আশানুরূপ হয়নি। এ বছর রফতানি সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতায় ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

মন্ত্রী আরও বলেন, দেশের রফতানি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু পণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য, জাহাজ, ফার্নিচার রফতানিতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য রফতানিতে বিভিন্ন হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এ হিসেবে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। গত বছর পণ্য রফতানিতে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া সেবা খাতে আরও ৩৫০ কোটি ডলার রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে। সেবা খাতে গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১২ কোটি ডলার। সেবা খাতে ৩৫০ কোটি ডলার নিয়ে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট রফতানি আয় হবে চার হাজার ১০০ কোটি ডলার।

মন্ত্রী জানান, গত বছর তৈরি পোশাক খাত মোট রফতানিতে ৮০ দশমিক ৮১ ভাগ, চামড়া খাত তিন দশমিক ৫৪ ভাগ, পাট ও পাটপণ্য দুই দশমিক ৭৬ ভাগ, হোম টেক্সটাইল দুই দশমিক ২৯ ভাগ অবদান রেখেছে। তৈরি পোশাক খাতে মাত্র প্রবৃদ্ধি কম হলেও প্রকৌশল পণ্যে ৩৫ দশমিক শূন্য পাঁচ ভাগ এবং প্লাস্টিক পণ্যে ৩১ দশমিক চার ভাগ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।

রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু, শিল্পসচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবার প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প খাত থেকে তিন হাজার ১৬০ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রফতানি লক্ষ্যমাত্রার ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৫০৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে নিট পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৫১০ কোটি ডলার যাতে প্রবৃদ্ধি নয় দশমিক ৭৬ শতাংশ ধরা হয়েছে।

এছাড়া নয় দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩৮ কোটি ডলার, যাতে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। এছাড়া এক দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে হিমায়িত মাছ রফতানির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কৃষিজাত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ছয় লাখ ডলার। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্যে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ওষুধে ১০ কোটি ডলার, হোম টেক্সটাইল রফতানির ৮৮ কোটি ডলার, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানির ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এদিকে শনিবার রাতে র‌্যাডিসন হোটেলে আইডিইবি ও ম্যানিলার কলম্বো প্লান স্টাফ কলেজের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী সেবা রফতানির ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিভাগে আরও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব। বিশ্ব বাজারে দক্ষ প্রকৌশলীর বিপুল চাহিদা রয়েছে, দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল। দেশের শিক্ষিত যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে দেশের চাহিদা পূরণ করে, রফতানি করা সম্ভব। মন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের দেওয়া সার্ভিস সেক্টরের সুবিধা গ্রহণের জন্য নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে হবে।