ডিএসইর সাপ্তাহিক চিত্র

পতনের ধাক্কায় পর্যুদস্ত মৌলভিত্তির শেয়ারদর

শেখ আবু তালেব: পতনের ধারাবাহিকতায় চলছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ছোট ও মাঝারি মানের কোম্পানির শেয়ারদরে। এমনিতেই পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। এর মধ্যে গত সপ্তাহে অর্থনীতির খাতভিত্তিক মন্দার চিত্র উঠে আসে গণমাধ্যমে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মুনাফা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এর প্রভাবে শীর্ষ স্থানীয় কেম্পানির শেয়ারদরে পতন ঘটে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পতন হয় ডিএসইর সূচকের।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বৃহৎ খাতের প্রায় সবগুলোর শেয়ারদরে পতন হয়। শুধু বস্ত্র খাতের শেয়ারদর কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ফলে মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদরে বিপর্যয় ঘটে। বিনিয়োগকারীদের লোকসান দিয়েও শেয়ার বিক্রির চাপে পতন ঘটে ডিএসইর সব সূচকের।

জানা গেছে, গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৫৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট হারায়, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের সপ্তাহেও সূচক হারিয়েছিল ৬০ পয়েন্টের বেশি। অন্য দুটি ডিএস৩০ ও ডিএসইএস সূচকেরও পতন ঘটে এই সময়ে।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৫৮টি কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। সপ্তাহ শেষে লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় মাত্র ৬৪টির, কমে ২৭৭টির বা ৭৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, দর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টির ও লেনদেন হয়নি দুটি কোম্পানির শেয়ার।

আগের চেয়ে গত সপ্তাহে লেনদেন কমে গেছে ডিএসইতে। তথ্য বলছে, আগের চেয়ে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন কমেছে ৩১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করছে এখনও। আলোচিত সময়ের নিজেদের সম্ভাব্য আয়, মুনাফা ও সম্পদের তথ্য দিয়েছে কোম্পানিগুলো। তাতে দেখা যায়, আগের তুলনায় এবার পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি কমেছে অধিকাংশ খাতের।

তালিকাভুক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানির সংশ্লিষ্ট খাতের শীর্ষ স্থানীয়দের পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে কমে গেছে বিক্রি। এসব তথ্য ব্যবহার করে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ভালো যাচ্ছে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদে প্রকাশিত হয়।

অর্থনীতির এমন চিত্রের প্রমাণও মিলছে সরকারের রাজস্ব আয়ের তথ্যে। খাতভিত্তিক রাজস্ব আদায় গত বছরের চেয়ে অনেক কম। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ের চিত্র অনুযায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না এনবিআর। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, মুনাফা কমে গেলে শেয়ারদর আরও কমে যেতে পারে ভবিষ্যতে। এই আতঙ্কে গত সপ্তাহে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্রয়ের চেয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন শেয়ার বিক্রিতে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নীরবতাও এই বিক্রয় প্রবণতাকে উসকে দেয়। ফলে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব তুলনামূলক বেশি বৃদ্ধি পায়; যার ফলে শেয়ারদর ও সূচকের পতন ঘটে বলে জানা গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ১৮ শতাংশ অবদান রাখে বস্ত্র খাতের শেয়ার। এছাড়া ১৪ শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। এর বাইরে মৌলভিত্তির খাতের মধ্যে ব্যাংক ও প্রকৌশল ৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ছয় শতাংশ, খাদ্য ও অনুষঙ্গ খাত চার শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড তিন শতাংশ, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত চার শতাংশ, টেলিকম খাত দুই শতাংশ ও সিমেন্ট খাত দুই শতাংশ অবদান রাখে।

একক কোম্পানি হিসেবে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে গত সপ্তাহে শীর্ষে ছিল আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ারদর বেড়েছে ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ৩২ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এরপরই রয়েছে কে অ্যান্ড কিউ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইফাদ অটোস, কেপিসিএল, রেকিট বেনকিজার, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।

অন্যদিকে শেয়ারদর পতনের শীর্ষে রয়েছে ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস। সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ারদর কমেছে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। দরপতনের তালিকার শীর্ষ ১০টিতে এরপর নাম লিখিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, সায়হাম টেক্সটাইল মিলস, আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, স্টাইল ক্রাফট, এসিআই লিমিটেড, মোজাফ্ফর হোসাইন স্পিনিং মিলস, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ও এসএস স্টিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০