মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নতুন বছরে আশংকাজনক হারে কমে গেছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা। গত বছরের শেষ সময়ে পুঁজিবাজার ভালো থাকায় বিও অ্যাকাউন্ট খোলার হিড়িক পড়ে। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে বাজারে ছন্দপতন ঘটে। যে কারণে হঠাৎ করেই আবারও থমকে গেছে বিও খোলার প্রবণতা। গতকাল পর্যন্ত মোট নতুন বিও হিসাব বেড়েছে ১৫ হাজার। সংশ্লিষ্টদের মতে, তা আগের তুলনায় খুবই কম।
ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত মোট বিও সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৫৬ হাজার। গত ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫১টি। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৪৯টি।
বর্তমানে যে বিও রয়েছে, এর মধ্যে পুরুষ অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯২টি। অন্যদিকে বর্তমানে নারী বিও সংখ্যা রয়েছে সাত লাখ ৯৬ হাজার ২৭৫টি। আর বর্তমানে কোম্পানির বিও সংখ্যা রয়েছে ১১ হাজার ২৭৫টি।
এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীন বলেন, পুঁজিবাজার ভালো না হলে এখানে বিনিয়োগকারীরা আসবেন না। এটা খুবই স্বাভাবিক। সে জন্য কোনো কারণে বাজারের পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে বিও খোলার প্রবণতা থমকে যায়। তবে এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এটা পুঁজিবাজারের ভালো লক্ষণ। আর এটা দেখে পুরোনো বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও পুঁজিবাজারে আসবে বলে আমি মনে করি।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল।
এর আগে সময়মতো বিও ফি না দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুই লাখের বেশি বিও। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানত দুই কারণে এবার অসংখ্য বিও বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি; অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা ৫০০ টাকা দিয়ে বিও নবায়ন করেননি। যার ফলে এসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে।
কিছুদিন আগেও বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতা একেবারেই থমকে ছিল। ২০১০ সালের পর থেকে মূলত বিনিয়োগকারী ও সাধারণ জনগণের পুঁজিবাজারের প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। যার ফলে বাজার ছাড়তে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। অপরদিকে সাধারণ জনগণও পুঁজিবাজারমুখী হননি। যে কারণে একেবারে থমকে যায় বিও খোলা। কোনো কোনো হাউজে দিনে একটিও বিও খোলা হয়নিÑএমন নজিরও রয়েছে। এরপর ২০১২ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিও বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে আবারও বিও খোলার প্রবণতা থমকে যায়।
Add Comment