মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতনের ধাক্কা লেগেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরে। পতনের জেরে সম্প্রতি ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ারদর। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে জেনারেশন নেক্সট টেক্সটাইল ও ঢাকা ডায়িং। হঠাৎ করে শেয়ারদর অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ার নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ইতোমধ্যেই এ দুই শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। তবে বিনিয়োগকারীরা কারসাজির অভিযোগ তুললেও দর কমার কোনো কারণ জানা নেই বলে দাবি করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
বাজার পর্যালোচনায় জানা যায়, কিছুদিন আগেও জেনারেশন নেক্সটের শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর হঠাৎ করেই কোনো কারণ ছাড়াই এ শেয়ারের দর কমতে শুরু করে। কয়েক দিনের মধ্যেই দর নেমে আসে ১০ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর হঠাৎ করেই এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর কমতে শুরু করে। এরই সঙ্গে কমে যায় শেয়ারের চাহিদাও। যার জেরে শেয়ারদর চলে আসে ফেসভ্যালুর নিচে। সর্বশেষ গতকাল এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয় ৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন, এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। কিছুদিন আগে একটি চক্র কারসাজি করে শেয়ারদর বাড়িয়ে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন বাজার পতনের সুযোগ নিয়ে তারাই আবার শেয়ারের দর কমাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর অভিহিত দর বা ফেসভ্যালুর নিচে চলে এসেছে।
শেয়ারদর কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেনারেশন নেক্সটের সচিব মো. শাহজাহান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শেয়ারের দর কেউ বেড়েছিল, আবার কেনইবা কমে যাচ্ছে এর কিছুই আমরা জানি না। শেয়ারদর হ্রাস-বৃদ্ধি হয় বিনিয়োগকারীদের চাহিদার ওপর। তাদের চাহিদা থাকলে দর বাড়ে, আবার চাহিদা না থাকলে কমে যায়Ñএটাই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের কোনো হাত নেই।’
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানের মোট শেয়ারের মধ্যে ৬৪.৩৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে। এছাড়া ১৩.৭৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন পরিচালকরা। বাকি ২১.৮৫ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে।
এদিকে গত আগস্টে ঢাকা ডায়িংয়ের শেয়ারদর ছিল ১০ টাকা ৯০ পয়সা। পরবর্তীতে বাজার পতনের জেরে শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে চলে যায়। সর্বশেষ গতকাল এ শেয়ার আট টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়। গত এক বছরের বাজারচিত্রে দেখা যায়Ñএ শেয়ার সর্বোচ্চ ১১ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়। একই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ার সর্বনিম্ন ছয় টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। তালিকাভুক্তির পর প্রতি বছরই বোনাস শেয়ার প্রদান করেছে তারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে যায় বস্ত্র খাতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৮.৪৪ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে, ৩০.৪৫ শতাংশ ধারণ করছেন পরিচালকরা। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ২০.১০ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে রয়েছে ১.০১ শতাংশ শেয়ার।
এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের উচিত দেখেশুনে বিনিয়োগ করা। যারা অন্যের কথায় বা গুজবে কান দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন, বেশিরভাগ সময় তাদেরই মাশুল দিতে হয়।’