মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে হঠাৎ ছন্দপতনের ধাক্কা লেগেছে। বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ দেখে মুনাফার আশায় গত এক মাস আগে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন উল্টো চিত্র দেখছেন। এক মাসের ব্যবধানে পাল্টে গেছে এসব বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও। এ সময়ের মধ্যে অনেকের পুঁজি কমে গেছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এক মাস আগে নর্দার্ন জুটের শেয়ার কিনেছিলেন বিনিয়োগকারী লুৎফর রহমান। প্রতিষ্ঠানটি ভালো স্টক লভ্যাংশ প্রদান করবে মূলত এ খবরেই তিনি শেয়ার কিনেছিলেন ৬৮০ টাকা দরে। ভেবেছিলেন ‘বি’ ক্যাটাগরির এ প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো মুনাফা করতে পারবেন। কিন্তু হয়েছে উল্টো। মাস শেষে এ বিনিয়োগকারীর প্রতিটি শেয়ারে লোকসান ৬০ শতাংশ।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, রেকর্ড ডেটের পর প্রাইস অ্যাডজাস্ট হলে শেয়ারের দর কমে যাবে, এটা জানতাম। সেই প্রস্তুতি নিয়েই কিনেছিলাম এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। কিন্তু এভাবে অস্বাভাবিক দর কমে যাবে ভাবিনি। কারসাজির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘এ শেয়ার নিয়ে কারসাজি না হলে দর এমনভাবে কমার কথা নয়। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সত্যতা যাচাইয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কুমার নন্দী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজারে শেয়ারের দর কখন বাড়বে বা কখন কমবে, সেটা আমাদের জানার কথা নয়।’
‘প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে’ এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে যারা কাজ করছি, তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও অনেক ভালো। ফলে আমাদের মাথায় এসব চিন্তা আসে না। আমরা শুধু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।’
এদিকে নর্দার্ন জুটের মতো অবস্থা মুন্নু সিরামিকের শেয়ারহোল্ডারদের। সম্প্রতি কোনো কারণ ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে ১১৯ টাকা হয়। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় ডিএসই থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে দরবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। জবাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের দরবৃদ্ধির কোনো কারণ জানা নেই। এর পর থেকে শেয়ারের দর কিছুটা নিম্নমুখী হলেও সংশ্লিষ্টদের মতে এ দরও ছিল অস্বাভাবিক। এক মাস আগেও এ শেয়ার লেনদেন হয় ১০০ টাকার ওপরে। গতকাল যা লেনদেন হয় ৮০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে পুঁজির ২৬ শতাংশ।
এদিকে এক মাসের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত পেনিনসুলা চিচাগংয়ের শেয়ারের দর কমেছে ২৫ শতাংশ। এক মাস আগে এ শেয়ার ৩০ টাকায় বেচাকেনা হলেও গতকাল তা লেনদেন হয় ২৩ টাকা ৩০ পয়সায়। একইভাবে মাসের ব্যবধানে ফরচুন শুজের শেয়ারের দর কমছে ২০ শতাংশের বেশি। যদিও গতকাল বিক্রেতাশূন্য হলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দর বেড়ে যায়। অন্যদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে সেন্ট্রাল ফার্মা, সালভো কেমিক্যাল, বিবিএস, আমরা টেকনোলজিসহ প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বড় ধরনের লোকসান দিতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নূর-ই নাহরীন বলেন, ‘পুঁজিবাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়া কমা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তাই এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করাও মুশকিল। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত দেখেশুনে বিনিয়োগ করা। কারণ তাদের পুঁজির নিরাপত্তা তাদেরই দিতে হবে।’