মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একযোগে কমছে তালিকাভুক্ত মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারদর। বড় বড় পতনের পর দু’একদিন বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। আবারও পতন নেমে আসছে।
যদিও এর উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে স্বল্প মূলধনি, অপেক্ষাকৃত কম দামি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের বেলায়। মন্দা বাজারেও বাড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। আর একশ্রেণির বিনিয়োগকারী বাছবিচার ছাড়াই এখানে বিনিয়োগ করছেন, যা একসময় তাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
দুদিন উত্থানের পর গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচকের ১০১ পয়েন্ট পতন হয়। পাশাপাশি কমে বেশিরভাগ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর। কিন্তু এর উল্টোচিত্র ছিল কম দামি এবং স্বল্প মূলধনি কোম্পানির বেলায়। সারা দিনই এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার দৌরাত্ম্য দেখা গেছে।
গতকাল ইনটেকের শেয়ারে দিনের শুরু থেকে বিক্রেতা ছিল খুবই কম। এক সময় বিক্রেতার শূন্য হয়ে যায় এই কোম্পানি। দিনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থায় গেছে। আগের কার্যদিবসেও এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল। গতকালও এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ে ১০ শতাংশ।
একই অবস্থা দেখা গেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বেলায়। এই কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে প্রায় ৯ শতাংশ। দর বৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে ছিল ঢাকা ডায়িংও। এই কোম্পানিতেও বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার সংখ্যাই বেশি ছিল। দিনশেষে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর সাত শতাংশ বাড়তে দেখা যায়।
এছাড়া জিলবাংলা সুগার, তুংহাই নিটিং, ফ্যামেলিটেক্স, জেনারেশন নেক্সটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। যে কারণে এসব শেয়ারের দর বেড়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কম দামি হোক, স্বল্প মূলধনি হোক আর মৌলভিত্তিসম্পন্ন হোক, যে কোনো ধরনের কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির নির্দিষ্ট কারণ থাকা দরকার। অকারণে শেয়ারের দর বাড়লে একসময় তা বিনিয়োগকারীর ভোগান্তির কারণ হতে পারে। তাই অকারণে শেয়ারের দর বাড়লে সেসব শেয়ার থেকে দূরে থাকাই উত্তম।
এই প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা-নুর-ই নাহারিন বলেন, কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে সেই কোম্পানি সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ও জানা দরকার। প্রতিষ্ঠানের সব বিষয় ইতিবাচক হলেই ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, স্বল্প মূলধনি এবং কম শেয়ার থাকা কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির সুযোগ বেশি থাকে। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে ভেবে দেখা উচিত। কারণ যার পুঁজি তাকেই নিরাপদে রাখতে হবে।
তাদের মতে, এই ধরনের শেয়ারের সঙ্গে না থেকে বিনিয়োগকারীদের ভালোমানের কোম্পানির সঙ্গে থাকা উচিত। এতে তাদের ঝুঁকি কমে।
বিগত ছয় বছর ধরে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজার। সব শ্রেণির কোম্পানির শেয়ার রয়েছে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে। ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত রয়েছে নিরাপদ স্থানে।
এদিকে গত ছয় বছর ধরেই যেসব কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়েছে এর মধ্যে বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি, দুর্বল কোম্পানি কিংবা ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানি। মূলত এসব কোম্পানির দাপটে পুজিবাজারে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতা ফেরেনি বলে মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতা আনতে হলে সবার আগে দরকার ভালো মানের প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ ভালো শেয়ারের জোগান বৃদ্ধি করা। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা হচ্ছে না। গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে বেশকিছু কোম্পানির তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ভালো মানের কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। যে কারণে ভালো শেয়ার না পেয়ে বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারের সঙ্গে থাকেন। তবে এটা ঠিক নয়।