পতনের বাজারে মূলধন বাড়ল সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাজজুড়ে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমার পাশাপাশি কমেছে সব মূল্যসূচক। তবে এরপরও বেড়েছে বাজার মূলধন।

প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৭ পয়েন্টের ওপরে। আর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৪ শতাংশের বেশি।

গত সপ্তাহ হরতাল ও অবরোধের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশ। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এক কার্যদিবস হরতাল এবং তিন কার্যদিবস অবরোধ কার্মসূচি ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর। বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা এ হরতাল ও অবরোধের মধ্যে পুঁজিবাজার ছিল পতনের মধ্যেই।

এর আগে ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আগে থেকে রাজনীতিতে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। আর ২৮ অক্টোবর বিএনপি কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত দু’জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এই সংঘর্ষের পর দেশজুড়ে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। পরবর্তীকালে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও হরতাল ডাকে। হরতাল পালন শেষে ৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। পরে জামায়াত ইসলামীও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিএনপি ও জামায়াতের এ অবরোধ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭০টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৯টির। আর ২২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনি¤œ দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকায়; যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪৬০ কোটি টাকা বা দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ২১ দশমিক ১১ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

সব মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৫৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৯৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৫৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। মোট লেনদেন বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে পূজা উপলক্ষে পুঁজিবাজারে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এমারাল্ড অয়েলের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার। ৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট। এছাড়া লেনদেনে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑজেমিনি সি ফুড, ওরিয়ন ইনফিউশন, শমরিতা হাসপাতাল, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ মনোষ্পুল পেপার, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং বিচ হ্যাচারি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০