Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:21 pm

পতনে চার হাজার পয়েন্টের নিচে নামল ডিএসইর সূচক

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতন পিছু ছাড়ছে না পুঁজিবাজারের। দীর্ঘদিন থেকে বড় পতনে বিনিয়োগকারীর পুঁজি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সম্প্রতি পতন আরও বড় হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে পাঁচ কার্যদিবস। এর মধ্যে তিন দিনই বড় পতন দেখতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। গতকাল বড় পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক চার হাজার পয়েন্টের নিচে চলে এসেছে।

গতকাল লেনদেনের মাত্র ১১ মিনিটেই সূচক কমে যায় ২০৯ পয়েন্ট। পতনের ধারায় চলতে থাকে লেনদেন। তবে শেষদিকে সূচকের কিছুটা উত্থান দেখা যায়। ফলে দিন শেষে ১৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে।

এদিকে সূচক পতনের দিনে তালিকাভুক্ত ১০ প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সবগুলো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটদর একযোগে কমেছে। গতকাল শেয়ারদর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে: ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, মুন্নু সিরামিক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, আজিজ পাইপস, পপুলার লাইফ, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স, এপেক্স স্পিনিং, এএমসিএল (প্রাণ) ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বেড়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের। আর সর্বনি¤œ দুই শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে রেনইউক যজ্ঞেশ্বরের।

গতকাল একযোগে সব কোম্পানির শেয়ারদর কমার প্রভাব পড়েছে বাজার মূলধনে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার এবং ইউনিটের বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ১১ হাজার ১১৩ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা, যা বৃহস্পতিবার ছিল তিন লাখ ২১ হাজার ৩৬২ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

এদিকে পতনের রেশ ধরে গতকাল লেনদেনও কমে গেছে। দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের দিন যার পরিমাণ ছিল ৪০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশের পুঁজিবাজার দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার দাবি করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ লক্ষ্যে গতকাল বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হকের কাছে দাবি জানান।

তবে বিনিয়োগকারীরা লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি করলেও ডিএসই বিষয়টি নিয়ে এ মুহূর্তে ভাবছে না। বরং চলমান মন্দাবস্থা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা।

এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে সূচকের পতন হচ্ছে এমনটি মানতে রাজি নন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অধিকাংশ বিনিয়োগকারী অকারণে ভয় পান। সেজন্য যে কোনো ইস্যু সামনে এলেই তারা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করে দেন। সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে বাজারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা বিচার করেন না। যে কারণে বাজারে ধস নেমে আসে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রস্তুত থাকা উচিত। করোনাভাইরাস নিয়ে এখনই আতঙ্কের কিছু আছে বলে মনে করি না। পতনের মূলে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মনোগত কারণ। তারা মনের দিক দিয়ে চাঙা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তরিক। এছাড়া বাজারে কীভাবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আশা করা যায়, পুঁজিবাজারে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, বিএমবিএ’র সহসভাপতি মো. মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মো. রিয়াদ মতিন ও কোষাধ্যক্ষ আবু বকর উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে ৯ মার্চ ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ২৭৯ পয়েন্ট বা সাড়ে ছয় শতাংশ।