Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 1:46 pm

পতনে সর্বোচ্চ ক্ষতি ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীদের

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দরপতনের পর আবারও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। যে কারণে পুঁজিবাজারমুখী হতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি এ দরপতনে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সব খাতের বিনিয়োগকারী। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীরা। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এ খাতের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। এই সময়ে তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের মধ্যে দর কমেছে ২৭টির। শেয়ার বিজের এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গত বছরের শেষদিকে পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হলে এ বছরের শুরুতে তা আরও ভয়াবহ হয়। সম্প্রতি (৫ ফেব্রুয়ারি) বাজার ঘুরতে শুরু করেছে। এই সময়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকারীরা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মধ্য জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১৬ কার্যদিবস। এ সময়ে ব্যাংক খাতের কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরপতন হয় উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারের। দর কমার হার ছিল প্রতিদিন এক শতাংশের বেশি। ১৬ কার্যদিবসে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমে  প্রায় ১৯ শতাংশ।

এদিকে একই সময়ের মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারের দর কমে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। একইভাবে সিটি ব্যাংকের শেয়ারের দর কমে ১৭ শতাংশ। এছাড়া এবি ব্যাংকের ১২ শতাংশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ৯ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারের ৯ শতাংশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শেয়ারের ১১ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে ১২ শতাংশ।

তালিকায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর কমে প্রায় আট শতাংশ। আর আইসিবি ব্যাংকের শেয়ারের দর পতন হয় আট দশমিক ৩৩ শতাংশ। একইভাবে আইএফআইসি ব্যাংকের আট শতাংশ, ইসলামী ব্যাংকের সাত শতাংশ, যমুনা ব্যাংকের চার দশমিক ১০ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১০ শতাংশ ও এটিবিএলের সাত শতাংশ।

এছাড়া ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দর তিন শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৯ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ১৩ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ছয় শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের সাত শতাংশ, এসআইবিএলের তিন দশমিক ৬০ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, স্ট্যান্ডান্ড ব্যাংকের প্রায় ১৪ শতাংশ এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারের দর কমে ১১ শতাংশ।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা  মো. আবদুল হালিম বলেন, ‘কিছুদিন আগে ব্যাংকসহ তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কমেছে। এর কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল বলে মনে করি না। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারী অল্পতেই প্যানিক হয়ে যায়। ফলে এর প্রভাব বাজারে পড়ে। যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাজারের কোনো সম্পর্কই নেই, সেসব বিষয়কেও তারা পুঁজিবাজারের ইস্যু বানান। এটা ঠিক নয়।’

এদিকে পতনের বাজারে তিনটি ব্যাংক ছিল ব্যতিক্রম। এই তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বাড়তে দেখা গেছে। ব্যাংক তিনটি হচ্ছে এনবিএল, ইউসিবিএল ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। এ সময়ের মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে ১২ শতাংশ। এছাড়া এনবিএলে শেয়ারের দর প্রায় দুই শতাংশ এবং ইউসিবিএলের শেয়ারের দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, পতনের শুরুই হয় এই খাতের শেয়ারের দরপতন দিয়ে। আর শক্তিশালী খাত হওয়ায় দ্রুত এর প্রভাব সার্বিক বাজার পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তোলে। তবে এই পতনের কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কোনো কারণে বাজার পরিস্থিতি খারাপ দেখলে বিনিয়োগকারীরা বয় পেয়ে ভালো শেয়ারও বিক্রি করে দেনÑএটা ঠিক নয়। ব্যাংক পুঁজিবাজারের একটি শক্তিশালী খাত। দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে পারলে এই খাত থেকে সন্তোষজনক মুনাফা করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন ইস্যুতে গত বছরের শেষ দিক থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। বছরের প্রথমদিকেই শুরু হয় ব্যাংক শেয়ারের দরপতন। বাজারের শক্তিশালী খাত হওয়ায় এর প্রভাব পড়ে সার্বিক বাজারে। যে কারণে অন্য শেয়ারের দর পতন শুরু হয়। এরপর মুদ্রানীতি নিয়ে নতুন আতঙ্কে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ারের দরপতন হতে শুরু করে। পরে সামনে চলে আসে খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়। সব মিলে অস্থির হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। ভয় পেয়ে স্বল্প দরে শেয়ার ছেড়ে দেন অনেক বিনিয়োগকারী।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, নতুন বছরে (গত সোমবার পর্যন্ত) ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৩৭৪ পয়েন্ট। গত বছরের শেষ দিনে ডিএসইর সূচক ছিল ছয় হাজার ২৪৪ পয়েন্ট। গত সোমবার যা স্থির হয় পাঁচ হাজার ৮৬৯ পয়েন্টে।