Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 9:55 am

পদত্যাগ করলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক : স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে পদত্যাগ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারার জন্য তিনি দেশটির জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এএফপি।

নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আবে জানান, তিনি দীর্ঘদিন একটি রোগে ভুগছিলেন, কিন্তু সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। আবে বলেন, তিনি চান না সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার অসুস্থতা বাধা হয়ে দাঁড়াক, তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন।

স্বাস্থ্যগত কারণে বেশ কয়েক দিন ধরেই আবের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই তার পদত্যাগের খবর আসতে শুরু করে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানিয়েছেন, আবের স্বাস্থ্য ভালো, কিন্তু দুবার হাসপাতালে যাওয়ায় গুজব সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত একবার হাসপাতালে সাড়ে সাত ঘণ্টার বেশি সময় কাটানোর ফলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে তার রাষ্ট্র পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।

শিনজো আবে পদত্যাগ করলে তার জায়গা কে নেবেন, সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হয়নি। অন্য আইনপ্রণেতারাও আবের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পার্টির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছে, উত্তরসূরি না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবেন আবে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে নির্বাচনে উত্তরসূরি খোঁজা হবে। এলডিপি পার্টিতে অভ্যন্তরীণ নির্বাচন হবে, যেখানে তার বিকল্প একজনকে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে। এরপর সংসদীয় ভোটাভুটির মাধ্যমে নবনির্বাচিত পার্টি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে হবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ১৬ আগস্ট সকালে টোকিওর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার এই অনির্ধারিত চিকিৎসা গ্রহণকে সরকারিভাবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যমে নানা জল্পনা এরই মধ্যে ডানা মেলতে শুরু করে। এএফপির তথ্য অনুযায়ী, আগে থেকেই আলসারেটিভ কোলাইটিসে ভুগছেন তিনি। তবে নতুন ওষুধে এত দিন তা নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিবিসির খবরে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরেই আলসারজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন আবে। তবে সম্প্রতি তার শারীরিক সমস্যাগুলো তীব্র হয়েছে।

টোকিওর কেইয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে আবে প্রতি ছয় মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাজিরা দিলেও এবারের সময়সূচি নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন তৈরি হয়। ষাণ¥াসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এর আগে গত ১৩ জুন তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সে হিসেবে আগামী ডিসেম্বর মাসে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তার সেখানে যাওয়ার কথা। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় রক্তবমি করেছিলেন বলে উল্লেখ করে একটি সংবাদ সাময়িকীতে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছিল।

ক্ষমতাসীন এলডিপি পার্টি থেকে বরাবরই বলা হচ্ছিল, শারীরিকভাবে মেয়াদ পূরণের মতো সুস্থতা রয়েছে তার। এমনকি গত মঙ্গলবারও এলডিপির ট্যাক্স প্যানেলের প্রধান আকিরা আমারি রয়টার্সকে বলেন, এ মুহূর্তে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা আবে দেবেন না।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সামাল দেওয়ায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই গত বছর অক্টোবর মাসে ভোগ্যপণ্যের কর বৃদ্ধি জাপানের অর্থনীতির ওপর আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছিল।

জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তিনি ২০১২ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। নির্বাচন, আইন লঙ্ঘন ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এত বছর ধরে টিকে আছে আবের সরকার।

২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর জনপ্রিয়তায় ব্যাপক হ্রাস, এর বিরূপ প্রভাবে সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে দলের পরাজয়, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের দুর্নীতি, নিজের দুর্বল শরীরÑসব মিলিয়ে মাত্র এক বছর পরই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। তবে ২০১২ সালে অন্য রকমভাবে ফিরে আসেন আবে। সংবিধানকে সংশোধন করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী সামরিক ও পুনর্গঠিত অর্থনীতির প্রতিশ্রæতি দিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবে।