পদত্যাগ করলেন বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। গতকাল সোমবার বিকালে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিশ্চিত করেছেন। নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি তীব্র সমালোচনার শিকার হন। খবর: বিডিনিউজ।
উপাচার্য নাসিরউদ্দিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ। এখন আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল তদন্তে দোষ পেয়ে উপাচার্যের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করার পর গত রোববারই ক্যাম্পাস ছেড়েছিলেন অধ্যাপক নাসির। তবে তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করলে পিছু হটবেন না তারা।
নিজের জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছিল নাসিরের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে লেখালেখিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে ওঠে। একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সময়িক বহিষ্কার করার পর উপাচার্য নাসিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যেই ওই শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের কথোপকথনের একটি অডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই ছাত্রীকে বকাঝকা ও হুমকি-ধমকি দিতে শোনা যায় উপাচার্যকে। মেয়েটির বাবাকে নিয়েও তীর্যক মন্তব্য করেন তিনি। ওই অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে উপাচার্যের সমালোচনার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনও জোরদার হয়। বিক্ষোভের মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১৪টি বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক?-স্বাধীনতার নিশ্চয়তা, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার না করা, অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান না করা এবং ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
তবে এতে সন্তুষ্ট না হয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এ আন্দোলন ঠেকাতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। শিক্ষার্থীরা তার প্রতিবাদ করলে একদল বহিরাগত হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জনকে আহত করে। ওই হামলার জন্য উপাচার্যকে দায়ী করে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী প্রক্টর। এদিকে উপাচার্যে পদত্যাগে এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও চলতে থাকে।
এ পরিস্থিতিতে ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কমিটি করে ইউজিসি। তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তার আগেই কাজ শেষ হয়। তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গত রোববার রাত ৯টার কিছুক্ষণ পর কড়া পুলিশ পাহারায় নিজের কোয়ার্টার থেকে গাড়িতে উঠে ক্যাম্পাস ছাড়েন অধ্যাপক নাসির। তার গন্তব্য ঢাকা বলে জানিয়েছিলেন গোপালগঞ্জ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম।
এদিকে ইউজিসির তদন্ত কমিটি গত রোববার সকালে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. কাজী শহীদুল্লাহর হাতে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিকালেই তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠিয়ে দেন তিনি। ওই প্রতিবেদনে উপাচার্যকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান অবস্থা, সেখানে উপাচার্যের কী ভূমিকা, দায় কার তা রয়েছে প্রতিবেদনে। বিভিন্ন অনিয়ম-অভিযোগসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বর্তমান ভিসির পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আর সম্ভব হবে না বলে মনে করে কমিটি।’
অধ্যাপক নাসিরের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাতাশিয়া গ্রামে। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পর সেখানেই বায়ো টেকনোলজির শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে তিনি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০