পদত্যাগ নয়, বিনিয়োগকারীরা অপসারণ চান পরিপালকের

গত ১০ বছরে যারা বাজার ভালো করতে পারছেন না, আগামী বছরগুলোতেও তারা তা পারবেন না। তাদের এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্বে থাকার প্রয়োজন নেই। তারা যতদিন এ বাজারের দায়িত্বে থাকবেন, বাজার ভালো হবে না। এছাড়া তাদের ওপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে তারা বাজারমুখী হচ্ছেন না। তাই পদত্যাগ চাই না, তাদের সবার অপসারণ চাই। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আকতার হোসেন সান্নামত, এফসিএ এবং স্কাইপের মাধ্যমে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিনিয়োগকারী এক্য পরিষদের প্রেসিডেন্ট মিজানুর রশীদ চৌধুরী। 

ফজলুল বারী বলেন, মাথায় যদি পচন থাকে সেক্ষেত্রে দেহের অন্য জায়গাও ভালো থাকে না। পুঁজিবাজারের অভিভাবক হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন প্রধান রয়েছেন। তিনি আজ প্রায় ১০ বছর ধরে বাজারের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ১০ বছরে বাজার কোনো উন্নতি করতে পারেননি। দিন দিন বাজার তলানিতে যাচ্ছে এবং অস্থিরতা বেড়েই যাচ্ছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে কান্নাকাটি করছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি দেখছেন বাজার ভালো হচ্ছে না। তাই ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। পুঁজিবাজার হচ্ছে স্বচ্ছতা ও আস্থার জায়গা। যদি বাজারে স্বচ্ছতা ও আস্থা সৃষ্টি করতে পারে সেক্ষেত্রে সব ধরনের বিনিয়োগকারী আসতে বাধ্য হবে। তখন বাজারে গতিশীলতা ফিরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে চীনের পুঁজিবাজার ধস হয়েছিল। সে ধস অতিক্রম করতে তাদের মাত্র দুই মাস লেগেছে। কিন্তু আমাদের বাজারের অবস্থা দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। গত ৯ বছরেও বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারল না। 

আকতার হোসেন সান্নামত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে পতনের কারণে একটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীর মধ্যে অনাস্থা বেড়েছে। তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না বাজার এ অবস্থায় আসবে। কারণ বাজার পরিপালন করার জন্য একজন অভিভাবক রয়েছে। এখন এ অভিভাবকের ওপরই আস্থার অভাব সৃষ্টি হয়েছে। যখন অভিভাবকের ওপর অভিযোগ আসে তখন বাজার ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, বাজারকে টেকসই করতে হলে নতুন করে কাঠামো তৈরি করতে হবে। মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে এবং সুশাসন আনতে হবে। এখানে মানসিকতার একটি বড় সমস্যা রয়েছে। কারণ এক সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বাজারের মোট বিনিয়োগের প্রায় ৪০ শতাংশ অবদান ছিল। এখন সেখান থেকে ২৫ শতাংশ নেমে এসেছে। এ অবনতির মূল কারণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে। আজ পর্যন্ত এ কারসাজি বন্ধ করতে পারেনি। এর তৎপরতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। আবার যারা বাজার নিয়ে সত্য কথা বলতে চায় তাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়।  আসলে এক সময় মানুষ মিথ্যা কথা বলতে ভয় পেত, কিন্তু এখন মানুষ সত্য কথা বলতে ভয় পায়। এখন মানসিকতা এমন পর্যায়ে এসে পড়েছে। এটা ভাবাই যায় না। 

মিজানুর রশীদ চৌধুরী স্কাইপে বলেন, গত ১০ বছরে যারা বাজার ভালো করতে পারছেন না, আগামী বছরগুলোতেও তারা বাজার ভালো করতে পারবেন না। তাদের এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্বে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তারা যতদিন এ বাজারের দায়িত্বে থাকবেন, বাজার ভালো হবে না। এছাড়া তাদের ওপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছেন না। তাই পদত্যাগ চাই না, তাদের সবার অপসারণ চাই। 

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০