রোহান রাজিব: ব্যাংকারদের পদোন্নতিতে বাধ্যতামূলক ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাতিল হচ্ছে। পদোন্নতিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা রাখা হবে কিনা তা পর্যালোচনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (আইবিবি)। আইবিবির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, আইবিবির সর্বশেষ গভর্নিং কাউন্সিল সভায় ব্যাংকারদের পদোন্নতিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা রাখা হবে কিনা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে। তবে আইবিবি প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পদোন্নতিতে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাতিলের পক্ষে মত দেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইবিবির মহাসচিব লাইলা বিলকিস আরা শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা কাদের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকবে বা কাদের জন্য থাকবে না বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। পর্যালোচনা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন দেয়া হবে। জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর আইবিবির কাউন্সিল সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা সিনিয়র অফিসারের পরের পদে পদোন্নতিতে দুই পর্বের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করা হোক। আর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন আইবিবি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
আইবিবি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি গত বছরের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায়।
এরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা দেয়, ব্যাংকের চাকরিতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অথবা সমতুল্য পদের ওপরে যেকোনো পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস ছাড়া কোনো ব্যাংকার পদোন্নতির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। দেশের সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি সব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। ২০২৪ সালে কার্যকরের কথা জানায় ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও ক্ষেত্রে একই নিয়ম চালু করা হয়। এর আগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমাকে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া থাকলেও এবার তা বাধ্যতামূলক করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইবিবির এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং পেশাকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে বলে ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। তখন তারা বলেন, ব্যাংকিং পেশা শুধু বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও ওই সময় নানা প্রশ্ন উঠে। কারণ ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছেন না।
গত বছরের ৮ মার্চ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক করা ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষার (সাবেক ব্যাংকিং ডিপ্লোমা) পাঠ্যসূচিতে বড় পরিবর্তন আনা হয়। একই সঙ্গে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পাসের নম্বর ৫০ থেকে কমিয়ে ৪৫ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ পরীক্ষা শুধু বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়।
জানা যায়, আগে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ২৪টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকাররা আর বিভাগীয় শহরের বাইরে অন্য কোথায় এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। আইবিবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এটি পৃথকভাবে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব পদে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ডিপ্লোমা পরীক্ষা হয় দুই পর্বে। প্রতিটি পর্বে ছয়টি করে ১২টি বিষয় থাকে।
ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় প্রথম পর্বে ছয় বিষয় ও দ্বিতীয় পর্বে পাঁচ বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এর বাইরে রয়েছে আটটি ঐচ্ছিক বিষয়। অ্যাকাউন্টিং ফর ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও মার্কেটিং অব ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রথম পর্ব থেকে বাদ দিয়ে তা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। এর পরিবর্তে প্রথম পর্বে যুক্ত করা হয়েছে মনিটারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম ও গভর্ন্যান্স ইন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন। পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলোতে কিছুটা পরিবর্তন করে পাঠ্যসূচি সংক্ষেপিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বে ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং বিষয় বাদ দিয়ে তা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে নতুন বিষয় হিসেবে ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ইন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন বিষয় যুক্ত হয়েছে। অন্য বিষয়গুলোতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়।