পদোন্নতি বঞ্চিতদের তোপের মুখে অগ্রণী ব্যাংকের বিদায়ী এমডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামস-উল ইসলামের শেষ কর্ম দিবস ছিল গতকাল। শেষ কর্ম দিবসে তিনি পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। এসব কর্মীরা গতকাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের আশ্বাসে কর্মীরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান।

অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, পদোন্নতি বঞ্চিতরা এমডির শেষ কর্মদিবসে তার কার্যালয়ের সামনে বিকাল ৪টার দিকে জড়ো হন। এ সময় পদোন্নতির দাবিতে সেøাগান দেন। প্রায় এক ঘণ্টার মতো এমডির রুমের সামনে অবস্থান নেন পদোন্নতি না পাওয়া কর্মকর্তারা।

জানা যায়, ব্যাংকটিতে পদোন্নতির জন্য একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় নম্বর দেয়া হয়। মফস্বলের বিভিন্ন শাখায় কর্মরতদের বেশি নম্বর দেয়া হয়। শহরের তুলনায় ওই কর্মকর্তাদের নম্বর বেশি হওয়ায় প্রমোশনের সংখ্যাও সেখানে বেশি। ওই তুলনায় শহরে কর্মরতদের তেমন নম্বর নেই। নম্বরের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে একাডেমিক ডিগ্রিতে যাদের ৪টি ফার্স্ট ক্লাস আছে। এ কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে মেধাবী অনেক কর্মকর্তা প্রমোশন পাননি।

অপরদিকে একই ক্যাটাগরির কর্মকর্তা হয়েও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে প্রমোশন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত অগ্রণী ব্যাংকের কর্মীরা। আবার প্রথম পর্যায়ে যেসব কর্মকর্তার পদোন্নতি পাওনা হয়েছিল, তাদের অনেককেও পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছিল কর্মকর্তাদের মধ্যে। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গতকাল এমডিকে ঘেরাও করেন পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তারা সুপার নিউমারারি প্রমোশন দেয়া দাবি জানান।

জানা যায়, গতকাল ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভা ছিল। পদাধিকার বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। সুপার নিউমারারি পদোন্নতির বিষয়টি গতকাল সভার এজেন্ডাভুক্ত ছিল। ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এজেন্ডাটি উত্থাপন করে তাৎক্ষণিকভাবে তা অনুমোদন করার জন্য পর্ষদের সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানান। এ নিয়ে পর্ষদ সদস্যদের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা কাটাকাটি হয়। আলোচনার একপর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নিযুক্ত একজন পরিচালক গতকালই এজেন্ডাটি অনুমোদনের বিষয়ে আপত্তি জানান। তখন ব্যবস্থানা পরিচালক সভায় অবহিত করেন, তিনি অবসরে যাওয়ার আগে এই সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তখন ওই পরিচালক জানান, যে বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদ নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া বিষয়টি আগে কোনো পর্ষদ সভায় উত্থাপন না করে এক দিনের আলোচনার ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে পদোন্নতির বিষয়টি অনুদোন দেয়া অযৌক্তিক বলেও মত দেন ওই পরিচালক। পরে দীর্ঘ আলোচনার পর সভায় সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পর্ষদ শর্ত দেয় যে, অন্যান্য ব্যাংকে কোন প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, তা প্রত্যক্ষ করে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পদোন্নতি প্রার্থীদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে তারপর পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটিতে পরিচালনা পর্ষদের তিনজন পরিচালককে সদস্য হিসেবে রাখা করেছে। এছাড়া ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের এই কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পর পরবর্তী কোনো পর্ষদ সভায় বিষয়টি অনুমোদন হতে পারে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে টানা ছয় বছর অগ্রণী ব্যাংকের এমডি পদে ছিলেন মো. শামস-উল-ইসলাম। এমডি পদের নির্ধারিত বয়সসীমা ৬৫ বছর শেষ হতে চললেও তিনি আইন সংশোধন করে হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির এমডি পদে থাকতে চেয়েছিলেন। এমডি পদে থাকা অবস্থায়ই শামস-উল-ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের নানা অভিযোগ তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার পরও এ ব্যাংকারকে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি রাখতে প্রভাবশালী করপোরেট গ্রুপ ও ব্যক্তিরাও ব্যাপক তৎপর ছিলেন। ছয় বছর ধরেই দেশের ব্যাংক খাতে নানা আলোচিত ঘটনার জš§ দিয়েছিলেন তিনি।

তবে শেষ পর্যন্ত শামস-উল-ইসলামকে বাদ দিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি পদে মো. মুরশেদুল কবীরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। আজ বুধবার শামস-উল-ইসলাম স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সোনালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুরশেদুল কবীর।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০