নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন সপ্তাহ ধরে হরতাল-অবরোধ পালন করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো ছাড়াও মাঝে এক দিন করে অবরোধ ছিল না। এতে ২৯ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ দিন হরতাল-অবরোধ পালন করা হয়েছে। এ সময় দেশের মহাসড়কগুলোয় গাড়ি চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। আর স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পদ্মা ও বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন পারাপার হ্রাস পেয়েছে ৪০-৫০ শতাংশ।
হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার রুটে যাত্রীবাহী যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিল। পণ্যবাহী যান চলাচলও কমেছে। এতে দেশের সর্ববৃহৎ দুই সেতু পদ্মা ও যমুনায় (বঙ্গবন্ধু) টোল আদায় প্রায় সোয়া ১৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে অর্থাৎ হরতাল-অবরোধ না থাকলে গত বছরের চেয়ে এ বছর সেতু দুটিতে যানবাহন পারাপার ও টোল আদায় বৃদ্ধি পায়।
সেতু বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, হরতাল-অবরোধের দিনগুলোয় পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৩টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৭ কোটি ২৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। গত বছর একই দিনগুলোতে সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৭৭টি। সে সময় টোল আদায় হয়েছিল ২৩ কোটি ৪৪ লাখ সাত হাজার ৯০০ টাকা। অর্থাৎ ১২ দিনের হরতাল-অবরোধে পদ্মা সেতুতে যানবাহন পারাপার কমেছে ১২ হাজার ৩১৪টি। এতে টোল আদায় হ্রাস পেয়েছে ছয় কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা।
এদিকে হরতাল-অবরোধের দিনগুলোয় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৭১০টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। গত বছর একই দিনগুলোতে সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৫৭৮টি। সে সময় টোল আদায় হয়েছিল ২১ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১২ দিনের হরতাল-অবরোধে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন পারাপার কমেছে ৬২ হাজার ৮৬৮টি। আর টোল আদায় হ্রাস পেয়েছে সাত কোটি সাত লাখ ২১ হাজার টাকা।
সেতু বিভাগের টোল আদায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মা সেতুতে গত বছর বাইক চলাচল বন্ধ ছিল। তবে গত জুনে সেতুতে বাইক চলাচলের অনুমতি দেয়ার পর থেকে যান পারাপারের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গেছে। যদিও বাইকের টোল মাত্র ১০০ টাকা হওয়ায় টোল আদায় সে তুলনায় কমই বেড়েছে।
তাদের মতে, হরতাল-অবরোধে সেতু দিয়ে বাইক পারাপার মোটামুটি স্বাভাবিকই রয়েছে। অন্যান্য বাহন বিশেষত যাত্রীবাহী বাস পারাপার অনেক হ্রাস পেয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়াও কমেছে। তবে বাইকের সংখ্যা যুক্ত হওয়ায় হরতাল-অবরোধের দিনগুলোয় সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হ্রাসের বিষয়টি পুরোপুরি বোঝা যায় না। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুতে আগে থেকেই বাইক পারপার উম্মুক্ত ছিল। তাই ওই সেতুতে হরতাল-অবরোধের প্রকৃত চিত্র দেখা যায়।
সেতু বিভাগের তথ্য বলছে, হরতাল-অবরোধের দিনগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে সবচেয়ে কম যানবাহন পারাপার হয়েছে ১ নভেম্বর (অবরোধের দ্বিতীয় দিন)। ওইদিন সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার হয় মাত্র ৯ হাজার ২৩২টি। এতে টোল আদায় হয়েছে মাত্র এক কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫০ টাকা। একই দিন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়েও সবচেয়ে কম যানবাহন পারাপার হয়েছে, যার সংখ্যা ছিল আট হাজার ৫৫০টি। এতে টোল আদায় হয় ৭২ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ টাকা।
এদিকে হরতাল-অবরোধের দিনগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে সবচেয়ে বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে ৯ নভেম্বর। ওইদিন সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার হয় ১৪ হাজার ৩৫০টি। টোল আদায় হয় এক কোটি ৬৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৫০ টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে সবচেয়ে বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে ১২ নভেম্বর, যার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৪৩টি। এতে টোল আদায় হয় এক কোটি ৩৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে হরতাল-অবরোধ ছাড়া দিনগুলোর মধ্যে গত ১০ নভেম্বর (শুক্রবার) পদ্মা সেতু দিয়ে ২৩ হাজার ২২৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৭০ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩ নভেম্বর (শুক্রবার) যানবাহন পারাপার হয়েছে ২৩ হাজার ৫৩৯টি। ওইদিন সেতুটিতে টোল আদায় হয়েছিল দুই কোটি ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫০ টাকা।