পদ্মা ব্যাংকে খেলাপি হলো এমএইচ গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন মিন্টুর মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান আগে খেলাপি হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায়। চিটাগং সিন্ডিকেট, সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড ও মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড মিলে মোট খেলাপি ৪২২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড ও মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড নতুন করে খেলাপি হয়েছে পদ্মা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায়।

সূত্রমতে, চট্টগ্রামভিত্তিক খাতুনগঞ্জের ট্রেডিং ও এগ্রোভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিটাগং সিন্ডিকেট, সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড এসব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এমএইচ গ্রুপ। আর এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মোশাররফ হোসেন মিন্টু। তিনি ব্যবসার প্রয়োজনে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন।

প্রথম দিকে নিয়মিত ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করলেও গত কয়েক বছর ধরে তিনি অনিয়মিত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে পুনঃতফসিল সুবিধা নেয়ারও চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দিতে না পারায় পুনঃতফসিল করেনি ব্যাংক। এতে গত ৩০ নভেম্বর ব্যাংকটির খেলাপি তালিকায় যুক্ত হয় সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড। এ দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট খেলাপি পাওনা হয় ২৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

পাওনা আদায়ে বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি আগামী ২৮ ডিসেম্বর নিলামে বিক্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট শাখা। আর নিলামকৃত সম্পত্তিতে আছে রাজধানীর গুলশান থানার ডুমনী মৌজায় বাড়িসহ চার দশমিক ১২ শতাংশ জমি, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার পূর্ব ষোলশহর মৌজায় ১৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ জমি এবং সীতাকুন্ডের কাটগড় মৌজায় ৭০ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ জমি।

অপরদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখা সূত্রে জানা যায়, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন মিন্টুর মালিকানাধীন চিটাগং সিন্ডিকেট, সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড নিয়ম অনুসারে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৩০ মার্চ ব্যাংকটি খেলাপি তালিকায় যুক্ত হয়। এ সময়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট খেলাপি পাওনা হয় প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চিটাগং সিন্ডিকেট লিমিটেডের কাছে ৩৯৩ কোটি টাকা, সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছে ২১ কোটি টাকা এবং মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ২৬ কোটি টাকা।

এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে বন্ধকি জমিগুলোর মধ্যে মোশাররফ হোসেন মিন্টুর নামে চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া, ষোলশহর, কোতোয়ালি, পতেঙ্গা, চান্দগাঁও প্রভৃতি মৌজায় ২৪৮ শতক জমি আছে। পাশাপাশি কাটগড় এলাকায় ১৭৬ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সীতাকুণ্ডে ১৭০ শতাংশ শিল্পপ্লট আছে। একই মৌজায় ১১৯ শতাংশ আবাসিক জমিও আছে। আর তার স্ত্রী উম্মে হানির নামে ঢাকা খিলক্ষেত এলাকার ধুমনী মৌজায় আট দশমিক ২৫ শতাংশ আবাসিক জমি এবং চট্টগ্রামের দক্ষিণ পতেঙ্গায় ১২ শতাংশ উঁচু বাণিজ্যিক জমি আছে। পাশাপাশি সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেডের নামে শহরের ৯ শতাংশ নাল জমি এবং সীতাকুণ্ড থানায় ৬২৬ দশমিক ৩১ শতাংশ শিল্পপ্লট আছে। এছাড়া এমএইচ ইম্প্রটেক্স লিমিটেডের নামে পটিয়ার ইয়াকুবদণ্ডি মৌজায় ৬৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং এমএইচ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেডের নামে আনোয়ারায় বিলপুর মৌজায় ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ জমি আছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন মিন্টু ২০০০ সালের পরে খাতুনগঞ্জ এলাকায় ট্রেডিং ব্যবসায় আসেন। প্রথমে চিটাগং সিন্ডিকেট নামে গুঁড়োদুধ আমদানির মাধ্যমে আলোচনায় আসে। পরে প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ টু ডে নামে বাজারজাতকরণে আসে। পরে তিনি আস্তে আস্তে সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড, মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, এমএইচ ইম্প্রটেক্স লিমিটেড, এমএইচ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং এমএইচ ইন্টারন্যাশনাল নামে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এমএইচ গ্রুপ গড়ে তোলেন। এসব ব্যবসার মুনাফা টাকা জমি ও অন্যান্য কাজে বিনিয়োগ করেন।

ঋণখেলাপির বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন মিন্টু ২০০৮ সালে চিটাগং সিন্ডিকেট নামে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। প্রতিষ্ঠানটি গুঁড়োদুধ আমদানির মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে। একদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বস্তা বস্তায় সরবরাহ করত। অপরদিকে প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ টু ডে নামে বাজারজাত করে। এ প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় তিনি গড়েছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কয়েক বছর আগে খাতুনগঞ্জ এলাকায় টু টু নামে সুদের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এ ব্যবসায়ে বেশ কিছু টাকা পার্টির কাছে আটকে যায়। এর পর থেকে ব্যবসায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। আমরা পাওনা আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছি।

অপরদিকে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলমের ব্যবহƒত ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবারই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানার জন্য সান ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং মমতা ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন মিন্টু শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি শূন্য থেকে বড় হয়েছি। এখন আমি ব্যবসায় পরিপক্ব। আমি আরও ১০-১২ বছর ব্যবসা করতে পারলে সব ঋণ শোধ করে আরও ভালো পজিশনে থাকব। প্রত্যেক ব্যাংকে আমার ঋণের চেয়েও বন্ধকি সম্পদের পরিমাণ বেশি। আমি যদি টাকাও দিতে না পারি, ব্যাংকগুলো আমার সম্পদ বিক্রি করে দেনার অতিরিক্ত টাকা আমাকে ফেরত দিতে পারবে। আমাকে যদি ব্যাংকগুলো এসব সম্পত্তি বিক্রি করতে দেয়, তাহলে আমি ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংকে তিনবার ঋণ রি-শিডিউলের জন্য চেষ্টা করছি। প্রতিবারই মার্জিন দিয়েছি। কিন্তু তারা রি-শিডিউল না করে সমন্বয় করেছে। কিন্তু ‘করে দিব, করছি’ এমন বলে সর্বশেষ নিলামের নোটিস দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ আমি মিটিং করেছি। কিন্তু রি-শিডিউলের জন্য ফাইল আর ব্যাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায় না। ফলে ঋণ রি-শিডিউল হয়নি। অথচ তারা আমার মাধ্যমে কিংবা ব্যাংক গুলশানের বাড়িসহ জমি সেল করলে তো ১৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০