Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:37 am

পদ্মা-মেঘনায়নেই কাক্সিক্ষত ইলিশ

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর:চর জেগে ওঠা, নদীর তলদেশে খাদ্য কমে যাওয়া এবং পানিদূষণের কারণে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। ফলে ভরা মৌসুমেও ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় দেখা মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। আর যে পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছে তাও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এদিকে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বাজার সয়লাব সাগরের (হাতিয়া-সন্দ্বীপ) ইলিশে। তবে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দামও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিন বড়স্টেশন মাছ ঘাটে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। পদ্মা-মেঘনার কাক্সিক্ষত ইলিশ নেই ঘাটে। চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার ইলিশের আমদানি তুলনামূলক অনেক কম। বাজারে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। এসব ইলিশ বেশির ভাগই এসেছে হাতিয়া সদ্বীপ থেকে। দাম বেশি হলেও এসব ইলিশ কিনতে ঘাটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বিগত বছরগুলোয় এ সময় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মণ ইলিশ আহরণ করলেও, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মণে।

জানা যায়, ইলিশের ভরা মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ এই আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। গত বছর একই সময় একই আকৃতির ইলিশের দাম ছিল সাড়ে ৬০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা। এমন তথ্য দিচ্ছেন ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতারা। ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার বেশি পড়ছে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম।

সরেজমিন ঘাটের আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, হাজী মালেক খন্দকার, হাজী বাবুল হাজী, গফুর জমাদার, ছোট সিরাজসহ অন্য আড়তগুলোয় ইলিশের স্তূপ। ইলিশ সংশ্লিষ্ট শত শত মানুষ কেনাবেচা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত দুই দিনে ৮ থেকে ১০টি ইলিশবোঝাই ফিশিং বোট ও পিকআপ ভর্তি হয়ে পাঁচ-সাতটি গাড়ি আসায় বড় স্টেশন মাছঘাট ইলিশে সয়লাব। প্রায় পাঁচ হাজার মণ ইলিশ বাজারে উঠেছে বলে জানান চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার।

তিনি বলেন, ইলিশ ধরা পড়ার অনুকূল পরিবেশ জোঁ, বাতাস ও বৃষ্টি ছিল বলে সাগর উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ইলিশ জেলের জালে ধরা পড়ছে। আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন থাকায় ভালো দামের আশায় বৃহত্তর নোয়াখালীর হাতিয়া, রামগতি, আলেকজান্ডার ও লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে এসব ইলিশ আসায় দামও কেজিতে দুই-তিনশ’ টাকা কমেছে। ইলিশ এভাবে আসতে থাকলে দাম আরও কমবে। স্থানীয় নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।

আলী আকবর নামে ঘাটের একজন ইলিশ ব্যবসায়ী বলেন, এখন ইলিশের দাম হওয়ার কথা সবচেয়ে কম। কিন্তু এখনই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই মাছ। ঘাটে এখন যেই ইলিশ দেখা যাচ্ছে তার বেশির ভাগই সাগরের। ঘাটে মাছ বেশি দেখলে কী হবে, এসব মাছ এখান থেকে অন্যত্র চালান হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে আছে ভারতে মাছ পাঠানোর গোপন প্রস্তুতি। লোকাল নদীর মাছ হলে ইলিশের দাম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি। সাগরের ইলিশ হওয়ায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি মাছ কিনতে হয়েছে ৯০০ টাকায়। ১৫-১৪ শত টাকা করে কেজি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইলিশ ব্যবসায়ী জানান, শুক্রবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালী, হাতিয়া, চরফ্যাসন ও পটুয়াখালী অঞ্চল থেকে চাঁদপুর ঘাটে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। একেক দিন চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ একেক রকম হয়। সরবরাহের ওপর ইলিশের দাম নির্ধারণ হয়। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৪-১৫শ’ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, আর দুই কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ খুব বেশি নেই। মাছের সঙ্গে ভাঁজ দিয়ে রাখতে সব ব্যবসায়ীরাই ৫ থেকে ১০টি পদ্মার ইলিশ সংগ্রহ করে রাখেন।

বড় স্টেশন মাছঘাটে ইলিশ কিনতে আসা মিঠু সাহা, সুবাস দেব বলেন, ‘মাছঘাটে অনেক ইলিশ কিন্তু দাম তো আগের মতোই। সরবরাহ বাড়ে কিন্তু দাম না কমার কারণটা কী? এখন কিছু ইলিশ কিনেছি। দাম কমলে আরও কেনার ইচ্ছে রয়েছে।’

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে আসছে। আর এসব ইলিশ অধিকাংশ মাঝারি আকারের। সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমবে। এবার সব পণ্যেরই দাম বাড়ায় এর প্রভাব ইলিশ মাছের ওপরও পড়েছে। তাই ভর মৌসুমেও ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাইরে।