পদ্মা সেতুতে আড্ডা-সেলফি, হেঁটে পার হওয়ার সুযোগও নিলেন অনেকে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পদ্মা সেতু দেখতে প্রথম দিনেই দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে পিকআপ ভ্যানে সামিয়ানা টানিয়ে, ডেকচিভর্তি বিরিয়ানি রান্না করে চলে এসেছেন একদল তরুণ। উদ্দেশ্য স্বপ্নের সেতুর রূপদর্শন আর নদী পেরিয়ে এপার-ওপারের ৮০ কিলোমিটার এক্সপ্রেস সড়কে ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দেয়া। গতকাল রোববার এমন আয়োজন করে শুধু ভোলানাথ রাজবংশী ও সুবাস রাজবংশীর পরিবারের লোকজনই দেশের বৃহত্তম এ সেতুর প্রথম দিনের চলাচলের সাক্ষী হতে পথে নেমেছেন তা নয়, অগুনিত মানুষের ঢল নেমেছে সেতু এলাকায়। খবর: বিডি নিউজ।

সেতু উদ্বোধনের পরের দিন নানা বেশে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, যাত্রীবাহী বাস, পিকআপসহ বিভিন্ন যানে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী পদ্মা সেতু এলাকায় এসেছেন। মানা থাকলেও অনেকেই হেঁটে পদ্মা সেতু পার হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন, তাতে সফলও হয়েছেন কেউ কেউ।

দিনের প্রথম ভাগের প্রায় পুরোটা সময় ধরে সেতুতে জটলা দেখা গেছে। মোটরবাইক, প্রাইভেট কার ও বড় বাস থামিয়েও উৎসুক জনতাকে সেতুতে নেমে ঘোরাঘুরি, ছবি তুলতে দেখা গেছে। এমনকি কেউ কেউ সেতুর রেলিংয়ে বসেছেন, সেলফি তুলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সেতুর মাওয়াপ্রান্তে কিছু সাইকেল আরোহী ও পায়ে হাঁটা উৎসুক জনতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখে পড়তে দেখা গেছে। তবে মূল সেতুর ওপরে দৃশ্য দেখে মনে হয়, বাধার চেষ্টা বৃথা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেতু কর্তৃপক্ষের টহল দল বারবার সবাইকে সরিয়ে দিতে চাইলেও কিছুক্ষণ পরই জটলা লেগে থাকতে দেখা যায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর দুই প্রান্তজুড়েই দিনভর হাজার হাজার মানুষকে হাঁটাহাটি, আড্ডা, গল্প, সেলফি তুলতে দেখা গেছে। এই অবস্থার মধ্যেই রোববার সেতু বিভাগ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে সেতুর ওপর বাস থেকে নামা, ছবি তোলা, পায়ে হেঁটে চলাচলে আবার নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে দেশের মানুষের মধ্যে যেরকম উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে, আবার আবেগে সেতু দেখতে এসে দর্শনার্থীদের অনেকের নিয়ম না মেনে ‘হেয়ালি’ আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। দিনের মধ্যভাবে সেতু পারাপারের সময় দেখা গেছে, দীর্ঘ এ সেতুর মাঝামাঝি এলাকায় বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রীরা আড্ডায় মেতে উঠেছেন।

সেতুর সৌন্দর্য পরখ করছেন, সেতুর নিচ দিয়ে সারি সারি নৌকা, স্পিড বোটের চলে যাওয়া দেখছেন। নিজেদের মধ্যে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে নিয়ে যাওয়া খাবারও খেয়েছেন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে। দিনের বড় অংশজুড়ে নিয়ম শিথিল থাকায় সেতুর বুকে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর যেমন অবারিত সুযোগ ছিল, মহাসড়কের বাকি অংশে দ্রুতগতির যানবাহনের চলাচলের কারণে বিষয়টা তত সহজ ছিল না।

পিকআপ ভ্যানে রঙিন সামিয়ানা টানিয়ে ঘুরতে আসা ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জের ভোলানাথ ও সুবাস রাজবংশীদের সঙ্গে কথা হয় মাওয়াপ্রান্তের টোলপ্লাজায়। তিনি জানান, সেতু উদ্বোধনের আনন্দে নিজেদের পারিবারিক পিকআপটি সাজিয়ে তারা দলবলে চলে এসেছেন। সেতু এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড়ের কারণে খাবারের সংকট হতে পারে, সেই আশঙ্কায় বাড়ি থেকে ডেকচিভর্তি বিরিয়ানি রান্না করে এনেছেন।

তবে সেতুতে উঠতে না পেরে নিজের ক্ষোভের কথা জানালেন ভোলার চরফ্যাশনের আবদুল জলিল। চরফ্যাশন পৌরসভায় কর্মরত এ উচ্চমান সহকারী সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেছেন শনিবার। ওই দিন জাজিরা প্রান্ত থেকে আবদুল জলিল পদ্মা সেতুর ওপর যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। বোর্ডিং ভাড়া করে জাজিরায় রাত থেকেছেন। সকালে লঞ্চে পদ্মা পার হয়ে সেতুর মাওয়াপ্রান্তে এসেছেন তিনি। টোল প্লাজা পার হওয়ার পরই দেখা জলিলের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নিজের ক্ষোভের কথা তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সকাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু সেতুর উপরে উঠতে দিচ্ছে না।

পদ্মা সেতুতে হেঁটে ওঠা কিংবা গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা বারণ থাকলেও প্রথম দিনে মানুষের উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল এসব বিধি-নিষেধ। যার পরিপ্রেক্ষিতে সেতু কর্তৃপক্ষ গতকাল গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই বিধি-নিষেধ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে সেতুর ওপর গাড়ি থামানো বন্ধে তৎপরও হয়েছে কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু শনিবার উদ্বোধনের পর রোববারই উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। খোলার পরপরই মানুষ হামলে পড়ে সেতুর ওপর দিয়ে যেতে। হেঁটে কাউকে উঠতে না দিলেও মোটর বাইক কিংবা গাড়ি নিয়ে উঠে অনেকেই সেতুর ওপর গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলায় মেতে ওঠে। অনেকে লাইভও করছিলেন। আবার বাস থামিয়েও নেমে পড়ে যাত্রীরা। এরপর বিকালে সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে বিধি-নিষেধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার কথা জানান সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব এ এস এম রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে জনসাধারণের প্রতি নির্দেশনা দেয়া আছে।’

যা যা করা যাবে না: পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকাবিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০