পদ্মা সেতুতে ঋণ বিষয়ে চীনা কোম্পানির অপপ্রচার!

ইসমাইল আলী: বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে পদ্মা সেতু। এতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে এ অর্থ ফেরত দেবে সেতু বিভাগ। যদিও পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে চীনা কোম্পানি।

চায়না রেলওয়ে গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে বলছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিল্ড-ওন-ট্রান্সফার (বিওটি) পদ্ধতিতে দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার অথবা প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছিল চীন। চারটি কোম্পানি- চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, ডেলিম এলঅ্যান্ডটি জেভি এবং স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশন দরপত্র কেনে। তবে শুধু চায়না মেজর ব্রিজ ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল দরপত্র জমা দেয়।

প্রসঙ্গত, চায়না রেলওয়ে গ্রুপের অধীন চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আর চায়না রেলওয়ে গ্রুপের আরেক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হলো চায়না মেজর ব্রিজ, যারা মূল পদ্মা সেতুর ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড হাইওয়ে বলছে, ২০১৪ সালে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঠিকাদার হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, যার নকশা প্রণয়ন করেছিল এইকম। এক্ষেত্রে বিওটি পদ্ধতিতে চুক্তি করা হয়, যাতে চায়না মেজর ব্রিজ দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে; যা প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ। চীনের বিভিন্ন মিডিয়াতেও এ ধরনের একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে চীন থেকে কোনো ঋণ নেয়া হয়নি। এ সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। চীনের ঋণে সেতু কর্তৃপক্ষ টানেল নির্মাণ করছে। এছাড়া চীনের ঋণে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প হচ্ছে। এগুলো তো গোপন করা হয়নি। তাহলে পদ্মা ঋণ নেয়া হলে তা গোপন করা হবে কেন? প্রকৃতপক্ষে এ সেতুতে চীনের কোনো ঋণ নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।

চায়না মেজর ব্রিজের ৭০ শতাংশ বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, চায়না মেজর ব্রিজের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৮৯ শতাংশ। তারা বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রী ও জিনিসপত্র আমদানি করে বিল জমা দেয়। এটি যাচাই-বাছাই করে বিল পরিশোধ করা হয়। এখন ঠিকাদার কোথায় বিনিয়োগ করল তা সেতু কর্তৃপক্ষের দেখার বিষয় নয়।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেয়া হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষকে। এ ঋণ পরিশোধে গত বছর ২৯ আগস্ট চুক্তি সই করে সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগ।

ঋণচুক্তি অনুযায়ী, সেতু কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে অর্থ বিভাগ তথা বাংলাদেশ সরকারকে ঋণ পরিশোধ শুরু করবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৩৫ বছর। এক শতাংশ সুদে এ ঋণ পরিশোধ করা হবে। এতে সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে প্রায় সর্বনি¤œ ৮২৬ কোটি থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।

প্রতি বছর চার কিস্তিতে মোট ১৪০ কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কিস্তি পরবর্তী ঋণ স্থিতির ওপর সুদ হিসাব করা হয়েছে। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষ চাইলে সুদসহ অর্থ অগ্রিমও পরিশোধ করতে পারবে। তবে কোনো কারণে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী কিস্তির সঙ্গে বকেয়াসহ পরিশোধ করতে হবে।

চুক্তিতে আরও বলা হয়, সেতু পারাপারে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব মোতাবেক টোল হার নির্ধারণে অর্থ বিভাগ সহায়তা করবে, যাতে সরকারের ঋণ পরিশোধে তারা সক্ষম হয়। নির্ধারিত টোল হার প্রতি ১৫ বছর পর ১০ শতাংশ হারে বাড়বে। প্রকল্পের বিস্তারিত ডিজাইন সমীক্ষা প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুর টোল হার দ্বিগুণ প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বর্তমানে মাওয়া ফেরিঘাটে যান পারাপারে বিভিন্ন যানবাহনের যে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে সেতুটির টোল হার তার দেড়গুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সে অনুযায়ী, পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেলে প্রস্তাবিত টোলের হার ১০৫ টাকা। ব্যক্তিগত গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাসে এ হার এক হাজার ৫০ টাকা। এছাড়া ছোট বাসে (২৯ বা তার চেয়ে কম আসন) টোলের হার দুই হাজার ২৫ টাকা ও বড় বাসে (৩০ আসনের বেশি) দুই হাজার ৩৭০ টাকা।

পদ্মা সেতুতে পারাপারের জন্য ছোট ট্রাকের (পাঁচ টনের কম) টোল এক হাজার ৬২০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের (৫-৮ টন) দুই হাজার ১০০ টাকা, বড় ট্রাকের (আট টনের বেশি) দুই হাজার ৭৭৫ টাকা। এছাড়া চার এক্সেলের ট্রেইলারের টোল ৪ হাজার টাকা আর চার এক্সেলের বেশি হলে পরবর্তী প্রতি এক্সেলের জন্য দেড় হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টোল যোগ হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০