পদ্মা সেতুতে এক বছরে ৮০০ কোটি টাকার বেশি টোল আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ২৫ জুন। আর ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি। সেদিন থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত সেতুটিতে ৮০০ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়েছে। যদিও দীর্ঘসময় বাইক পারাপার বন্ধ ছিল সেতুটিতে। এরপরও প্রথম বছর পদ্মা সেতুতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টোল আয় হয়েছে।

সেতু বিভাগের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, প্রথম বছর পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হওয়ার কথা ছিল ৬৫৪ কোটি টাকা। তবে ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত টোল আদায় হয় ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর গতকাল বিকাল নাগাদ তা ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় যত যাবে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় তত বাড়বে। তবে বাইক চলাচল বন্ধ রাখায় পদ্মা সেতুতে আগাম ধারণার চেয়ে কম যান চলাচল করেছে।

তথ্যমতে, গত বছর ঈদুল আজহার আগে ৮ জুলাই পদ্মা সেতুতে (এক দিনে) সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছে। ওইদিন সেতুটিতে টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল চার কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর পদ্মা সেতুতে সবচেয়ে বেশি যানবাহন পারাপার হয় গত বছর ২৬ জুন। ওইদিন সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার ৩১৬টি। তবে এর প্রায় ৭৫ শতাংশই ছিল বাইক। আর বাইক বন্ধের পর ৮ জুলাই পদ্মা সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ যানবাহন পারাপার হয়। সেদিন সেতুটি দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৭২৩টি।

রাষ্ট্রপতি ছাড়া পদ্মা সেতুতে সকলের টোল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ জন্য উদ্বোধনের দিন গত বছর ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ও সঙ্গে থাকা গাড়ি বহরের জন্য ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা টোল পরিশোধ করেন। ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত মোট আয়ের মধ্যে সাধারণ যানবাহনের টোল ছিল ৭৯৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থা টোল প্রদান করেছে ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেতুটিতে গড়ে দৈনিক যানবাহন পারপার হয়েছে ১৫ হাজার ৫৮৬টি এবং দৈনিক টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮০ টাকা।

উদ্বোধনের পরের দিন (২৬ জুন) সকাল ছয়টা থেকে ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত তিন লাখ ৩৮ হাজার ৩২৭টি বাইক (৬৮ দিনে), ১৫ লাখ ১০ হাজার ২৯১টি কার/জিপ, পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯টি পিকআপ, ছয় লাখ ৯০ হাজার ২২৭টি মাইক্রোবাস, ১৫ লাখ ১২ হাজার ৬৪৬টি বাস (ছোট, মাঝারি, বড় বাসসহ), ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮টি ট্রাক (ছোট, মাঝারি, বড় ট্রাকসহ), ২৮ হাজার ১৯৭টি ট্রেইলারসহ সর্বমোট ৫৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৫টি যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে।

প্রসঙ্গত, টোলের টাকায় পদ্মা সেতুর ঋণের কিস্তি শোধ ছাড়াও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানো হচ্ছে। টোল আদায়ে অপারেটরের খরচও এ থেকে মেটানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ঋণের চারটি কিস্তি বাবদ ৬২২ কোটি ৯৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৪২ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই সরকারের অর্থ বিভাগের সঙ্গে একটি সংশোধিত ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ১% সুদে ৩৫ বছরের মধ্যে ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হবে।

ঋণ পরিশোধের সময়সূচি অনুসারে, প্রতি অর্থবছরে চার কিস্তিতে মোট ১৪০ কিস্তিতে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া সেতুর বিস্তারিত নকশার জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ২% সুদে দুটি ঋণচুক্তির আওতায় ১৫ বছর মেয়াদি মোট ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকার স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (এসডিআর) ঋণ নেয়া হয়েছে। বছরে চার কিস্তি, অর্থাৎ মোট ৬০ কিস্তিতে সুদ ও মূলসহ ২৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩০ টাকার এসডিআর পরিশোধ করা হবে।

প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ৩৫ বছরে পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হবে এক লাখ এক হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। কিস্তি, ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৬৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নেবে অর্থ বিভাগ। বাকি টাকায় নিয়মিত খরচ ছাড়াও প্রতি ১০ বছর অন্তর বড় সংস্কার করা হবে। তারপরও ৩৫ বছর পর ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা দেবে পদ্মা সেতু।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুতে ২০২২ সালে দৈনিক গড়ে ২৩ হাজার ৯৫৪টি যান চলবেÑএ রকম তথ্য ছিল সমীক্ষাতে। তবে সেতু বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের শেষ ছয় মাসে ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৬২২টি যানবাহন চলেছে। দৈনিক গড়ে ১৪ হাজার ৭৪৩টি যানবাহন চলেছে। মূলত বাইক বন্ধ থাকায় এ সংখ্যা কম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০