পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয়ের ১৭% রেলের কাছে চায় সেতু বিভাগ

ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। দ্বিতল এ সেতুর নিচতলা দিয়ে চলবে ট্রেন। এজন্য রেলওয়ে ডেক, ভায়াডাক্ট ইত্যাদি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ১৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের তা প্রায় ১৭ শতাংশ এমনটাই দাবি সেতু বিভাগের। তাই পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালাতে সুদসহ ৩৫ বছরে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে রেলওয়েকে।

সম্প্রতি রেলওয়েকে চিঠি দিয়ে এ অর্থ দাবি করে সেতু বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রেলভবনে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানানো হয়, রেলওয়ের পক্ষে এত টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তবে সেতু বিভাগের প্রস্তাব পর্যালোচনা ও বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচলে আরোপিত ট্যারিফ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে প্রতিবেদন জমা দিতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ ঋণ পরিশোধে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট চুক্তি সই করে সেতু কর্তৃপক্ষ ও অর্থ বিভাগ। ঋণচুক্তি অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর থেকে ৩৫ বছরে এক শতাংশ সুদে অর্থ বিভাগের ঋণ পরিশোধ করা হবে। এতে সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদসহ রেলকে পরিশোধ করতে হবে ছয় হাজার ১৯৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

এদিকে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোজনের জন্য ২০১০ সালে এডিবির থেকে ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ১৯২ এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) ঋণ নিতে হয়। দেশীয় মুদ্রায় তা প্রায় ৫৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর জন্য রেলওয়েকে পরিশোধ করতে হবে ছয় হাজার ২৫২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ৩৫ বছরে এ ঋণ শোধ করতে হবে।

শিডিউল অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর রেলওয়েকে ১০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরের অর্থবছর তা কিছুটা কমে দাঁড়াবে ১০৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। পরের কয়েক অর্থবছরে তা আরও কমবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থবছরে ১০৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর পরের (২০২৭-২৮) অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ও ২০৩৭-৩৮ অর্থবছর ১৯০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ২০৪৭-৪৮ অর্থবছর সর্বোচ্চ ২৫১ কোটি ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে রেলওয়েকে। তবে ৩৫তম বছর (২০৫৬-৫৭ অর্থবছর) পরিশোধ করতে হবে ২২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

যদিও বঙ্গবন্ধু সেতুতে বর্তমানে ট্রেন চলাচলের জন্য বছরে এক কোটি টাকা ট্যারিফ দিতে হয় রেলওয়েকে। গত নভেম্বরের আগে দিতে হতো বছরে ৫০ লাখ টাকা।

সম্প্রতি রেলভবনে অনুষ্ঠিত পদ্মা সেতুতে প্রস্তাবিত ট্যারিফকে অস্বাভাবিক আখ্যায়িত করা হয়। বৈঠকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে ট্রেনে কী পরিমাণ ট্যারিফ পরিশোধ করা যৌক্তিত হবে তা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটিতে আরও রয়েছেন পরিচালক (প্রকৌশল), পরিচালক (ট্রাফিক) ও পরিচালক (অর্থ)। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

ওই কমিটি পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্য চাহিদা, আয় ও ব্যয়, বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে যাত্রী পরিবহনের আয় ও নির্ধারিত ট্যারিফের সঙ্গে পদ্মা সেতুর ট্যারিফের তারতম্য সবই খতিয়ে দেখবে।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, রেল সরকারি সংস্থা আর সেতু কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাই পদ্মা সেতু ব্যবহারে প্রস্তাবিত ট্যারিফ দিতে হলে রেল খাতে সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। রেলের নিজস্ব আয় দিয়ে এ অঙ্ক পরিশোধ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই রেলের কাছ থেকে এত মোটা অঙ্কের ট্যারিফ দাবি অযৌক্তিক বলে তা মওকুফ করা দরকার বলে তিনি বৈঠকে মত দেন।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেন চলাচলে সেতু থেকে ট্যারিফ, টোল বা টোকেন মানি চাওয়া যৌক্তিক নয়। কারণ রেলের আয় সরাসরি সরকারের রাজস্ব খাতে যুক্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা এক হবে না। ট্যারিফ নির্ধারণে বিভিন্ন দেশে ৫০ কিলোমিটার, ৮০ কিলোমিটার আবার কোনো ক্ষেত্রে ১০০ কিলোমিটার হিসাব করা হয়। পদ্মা সেতুর বেলায় একটা প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে। নতুবা যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ভাড়ায় প্রভাব পড়বে।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু ব্যবহারে রেলওয়ের জন্য ট্যারিফের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একটি কমিটি করা হয়েছে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা করতে। এর পর রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আরেকটি বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে ২৫ জুন। তবে পদ্মা সেতুতে ট্রেন লাইন বসানোর কাজ শুরু হবে জুলাইয়ে। আর আগামী বছর মার্চে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০