নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন কিছু সময়ের জন্য পায়ে হেঁটে যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হতে পারে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গাড়ি চলবে পরের দিন সকাল থেকে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ, বৃহত্তর ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জের নেতাকর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সস্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের বৃহৎ এ অবকাঠামো আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন ২৫ তারিখে কোনো গাড়ি পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাবে না। ২৬ তারিখ সকাল থেকে সময় জানিয়ে দেয়া হবে, টোল দিয়ে পার হতে হবে। আসা-যাওয়া হবে। সেটা পরের দিন। আগের দিন (২৫ জুন) হয়তো কিছু সময়ের জন্য খোলাও হতে পারে, সেটা এখনও নিশ্চিত না। সেদিন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারবেন। এমন সময়সীমা দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে।’
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘অনেক ঘটনা ঘটছে। জানি না চট্টগ্রামের এ কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না? পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে এ ধরনের অন্তর্ঘাত করার ষড়যন্ত্র আছে। এমনকি উদ্বোধনের দিনেও একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য অনেকে কিন্তু মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। যাতে শত্রæরা ভেতরে ঢুকে কোনো ধরনের নাকশতা ও অন্তর্ঘাত না করতে পারে। এই কথাটা বলার জন্য আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।’
সবাইকে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার আহŸান জানিয়ে জনসভার দিন পানি, টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান সেতুমন্ত্রী। ২৫ জুন কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে অনুষ্ঠেয় জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন কাদের। তিনি বলেন, ‘সেটা ১৫ কিংবা ২০ লাখও হতে পারে। কী হবে সেটা এখন বলতে পারব না। তবে জনতার ঢল নামবে এটা বলতে পারি। পদ্মা সেতু ও শেখ হাসিনাকে দেখতে আসবেন। এই দুটোই তো আকর্ষণ।’
পদ্মা সেতুর সব কর্তৃত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উল্লেখ করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার অসীম সাহসের সোনালি ফসল, সততা ও সাহসের প্রতীক।’
পদ্মায় নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর।
কভিড-১৯ মহামারি আর বন্যার মধ্যেও কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়। পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করে গুজব ছড়ানো হয়েছিল দাবি করে এখনও সেসব হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যয় সংকোচন করে হেলিকপ্টার কেনা হবে এমন গুজবও তো আছে।’
পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু কোনো ভিত্তিপ্রস্তর হয়নি। কী মিথ্যাচার। মির্জা ফখরুল, কীভাবে যে এত মিথ্যা কথা বলে। এদের বুকে বিষজ্বালা নিয়ে অপপ্রচার, মিথ্যাচার করছে।’