পদ্মা সেতু: ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদনে আপত্তি

ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। যদিও মূল সেতু ও নদী শাসন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে। এছাড়া ১৪টি মূল সেতুর পিলারের পাইলের নকশায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে আবারও প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে জমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন করেনি পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে বিস্তারিত প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে নদী শাসনের কাজে অতিরিক্ত এক হাজার ১৮০ দশমিক ৮১ হেক্টর জমির প্রয়োজন। এজন্য প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) বাইরে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এটি অনুমোদনের জন্য গত মাসে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে চিঠি দেয় সেতু বিভাগ।

এতে বলা হয়, ডিপিপিতে এক হাজার ৫৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থের সংস্থান ছিল। এর মধ্যে এক হাজার ৩৯০ দশমিক ৬২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে এক হাজার ২৮৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আরও ১৪৩ দশমিক ৪৩ হেক্টর হুকুম দখল করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এতে মোট অধিগ্রহণ দাঁড়াবে এক হাজার ৫৩৮ হেক্টর। এর বাইরে এক হাজার ১১০ দশমিক ৮১ হেক্টর জমি প্রয়োজন। প্রকল্প অনুমোদনে ২০১৬ সালে জারি করা পরিপত্রের ২০ ধারা অনুযায়ী এ অনুমোদন চাওয়া হয়।

নতুন জমির মধ্যে শরিয়তপুরে ৩১ দশমিক শূন্য তিন, মাদারীপুরে ১৫৮ দশমিক ১০ ও মুন্সীগঞ্জে ১০ দশমিক ৫৬ হেক্টর নদী শাসনের কাজে প্রয়োজন। আর ৯৮১ দশমিক ১২ হেক্টর জমি ড্রেজিং স্পয়েল (খননকৃত মাটি) ফেলার জন্য দরকার হবে। এ জমি অধিগ্রহণে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা দরকার। তবে ডিপিপিতে এজন্য বরাদ্দ নেই। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনক্রমে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। পরবর্তী সময়ে ডিপিপি সংশোধনের সময় এ ব্যয় সমন্বয় করা হবে।

তবে ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদনে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এক্ষেত্রে জানানো হয়, এত অধিক পরিমাণ জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের নেই। এক্ষেত্রে ১৯(১) ধারা অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, ২০ একরের অধিক জমি অধিগ্রহণে একনেকের অনুমোদন আবশ্যক। এজন্য একনেকে পাঠানোর জন্য বিস্তারিত প্রস্তাব দাখিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

যদিও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব এখনই একনেকে অনুমোদন দরকার নেই বলে মনে করছেন সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, জমি অধিগ্রহণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যয় পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনক্রমে ব্যবহার করা হবে। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প সংশোধনের সময় এটি যোগ করে দেওয়া হবে। ২০১৬ সালের আগস্টে সরকারের জারি করা পরিপত্র অনুসারে এ ব্যয় নির্বাহ করা হবে। এজন্য অনুমোদন চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে চিঠি দিয়েছে সেতু বিভাগ।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, পদ্মা সেতুর নদী শাসনে ড্রেজিং স্পয়েল (খনন করে তোলা মাটি) ফেলার জন্য বাড়তি জমি দরকার। এতে প্রাথমিকভাবে যে জমির পরিমাণ ধরা হয়েছিল তার চেয়ে বেশি জমি লাগছে। এজন্য অতিরিক্ত এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনক্রমে বাড়তি ব্যয় নির্বাহ করা হবে। পরে তা ডিপিপি সংশোধনের সময় সমন্বয় করা হবে। এজন্য অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে জমি হুকুম দখলের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে অনুমোদন না পাওয়ায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু প্রকল্পকে ভাগ করা হয়েছে পাঁচটি মূল অংশে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ পাঁচ প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয় ২৩ হাজার ৬২১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ১৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ধরা হয় জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও অন্যান্য খাতে। এতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে নতুন ব্যয় যুক্ত হলে পদ্মা সেতুর ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিনবারে পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় বাড়ছে ২০ হাজার ৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এর আগে  ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট পদ্মা সেতু প্রকল্প প্রথম দফা অনুমোদন করে একনেক। সে সময় শুধু সড়ক সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এতে প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা অনুমোদন করা হয়। এবার দ্বিতীয় দফায় সংশোধন করা হচ্ছে। তবে আগামী চার বছরে প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এতে প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করতে হতে পারে বলে মনে করেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০