জীবনের জন্য প্রয়োজন ওষুধ। বিশেষ করে রোগমুক্তির জন্য ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এজন্য দরকার মানসম্মত ও নির্ভেজাল ওষুধ। এমন মান বজায় রেখে বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এটি।
২০০৫ সালের আগস্টে পথচলা শুরু করে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। পপুলার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটি। ফার্মাসিউটিক্যালসের বাইরে গ্রুপটিতে রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওষুধ ও অন্য পণ্য উৎপাদনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। সব ধরনের পণ্য তৈরিতে উন্নত ও গুণগতমানে সেরা কাঁচামাল ব্যবহার করে তারা। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের মূল লক্ষ্য সর্বোৎকৃষ্ট মান নিশ্চিত করে ওষুধ উৎপাদন করা।
বিশ্বের সব দেশে উৎপাদিত ওষুধের গুণগত ও পরিমাণগত মান নির্ধারণের জন্য রয়েছে ডঐঙ পগেচ নীতিমালা। এই নীতিমালা সম্পূর্ণরূপে মেনে চলে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও প্রোডাকশন ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। বিভাগ দুটি উৎপাদিত ওষুধের মান যাচাই করে থাকে। এই দুই বিভাগের দক্ষ ফার্মাসিস্টরা নিয়মিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়া ও ইউরোপিয়ান ফার্মাকোপিয়ার স্ট্যান্ডার্ড ফরমুলেশনের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, ওঈঐ-এর নিয়ম অনুসারে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, অয়েন্টমেন্ট, লিকুইড, ইনফিউশন প্রভৃতি উৎপাদনে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬০ শতাংশ, ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৬৫ শতাংশ ও ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৭৫ শতাংশ উৎপাদননীতি অনুসরণ করে। বিপণন কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ১৬টি ডিপো রয়েছে।
পণ্য
ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ক্যাপলেট, টিকা, ইনসুলিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, চোখের ড্রপ, ফ্যাট ইমালসন্স, সিরাপ, সাসপেনশন, সাসপেনশন পাউডার, ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ইনফিউশন, ইনজেকশন, অ্যানেসথেসিয়া পণ্য প্রভৃতি তৈরি করে থাকে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস।
যেখানে রফতানি হয়
স্বল্পোন্নত একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ রফতানি করছে বাংলাদেশ। ওষুধ শিল্পে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত প্যাটেন্ট ছাড় পেয়েছি আমরা। অর্থাৎ ওষুধ উৎপাদন ও রফতানির জন্য মেধাস্বত্ব খাতে বাংলাদেশকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। সঙ্গত কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের তৈরি ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০০৬ সাল থেকে রফতানি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির নানা পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে শতাধিক ব্র্যান্ডের ওষুধ।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ম্যাকাউ, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, বেলাইজ, গুয়েতেমালা, মেক্সিকো, চিলি, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, আর্মেনিয়া, জ্যামাইকা ও ফিলিপাইনে রফতানি হচ্ছে তাদের পণ্য। শিগগিরই হাইতি, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ট্রিনিদাদ, পানামা, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সুদান ও রুয়ান্ডায় রফতানি হবে প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ।
জনবল
প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় শক্তি এর জনবল। প্রায় দুই হাজার ৭০০ কর্মী রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। এর মধ্যে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছেন ৮৫০ জন। সুদক্ষ জনশক্তির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এ প্রতিষ্ঠান। খুব অল্প সময়ে নতুন কোনো পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে তাদের। সততা, নিষ্ঠা, জ্ঞান ও কঠোর পরিশ্রম প্রতিষ্ঠানটির পুঁজি। নতুন পণ্য উৎপাদনের আগে নানা ধরনের গবেষণা ও
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান তারা। সূক্ষ্মভাবে ও ধাপে ধাপে পণ্যের গুণ নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিভাগ। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসকে বিশ্বের নামকরা ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চান সংশ্লিষ্টরা।
সিএসআর
করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) থেকে রোগী ও সমাজের জন্য নানা কাজ করছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিবেশ বেশ উন্নত। স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, গোষ্ঠীবীমা, মেডিকেল সহায়তা, হেলথ কাভারেজসহ আরও অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম রয়েছে তাদের। পরিবেশদূষণ কমিয়ে জ্বালানি ও পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবহার হয় এখানে। পরিবেশসম্মতভাবে বর্জ্য শোধনাগারের জন্য রয়েছে নিজস্ব ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি)।
পরিচালনা পর্ষদ
পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তাহেরা আখতার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ব্যবস্থাপনা পর্ষদে আরও আছেন ড. এমএ মালেক চৌধুরী, কাজী মোহাম্মদ বদরুদ্দিন, মো. কামরুল হাসান, রবিন কুমার পাল ও এম মাসউদ হাসান।
‘মানুষের সেবায় কাজ করছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। উদ্ভাবনী শক্তি ও প্রযুক্তির মিশেলে স্বাস্থ্যসেবা খাতের নানা সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য খাতে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার তাগিদ থেকে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের যাত্রা।
বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে বেশকিছু বিষয় সংযোজন করেছে পপুলার। জীবনমান উন্নয়নে আমাদের পণ্য ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে’
-ডা. মোস্তাফিজুর রহমান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা