নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন।’ লন্ডনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দেওয়া গত শনিবারের এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন তারেক রহমানের আইনজীবী। ওই বক্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে মামলা দায়েরের হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে এতে। এদিকে এ বক্তব্যকে উড়ো ও অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, সোমবার দুপুরে রেজিস্টার্ড ডাকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের প্রতি আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের বরাতে দৈনিক কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ওই দুটি পত্রিকার সম্পাদককেও নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে তারেকের আইনজীবী জানান।
সূত্রমতে, তারেক রহমান বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়ার পর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান। এরপর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। দুই বছর আগে মুদ্রাপাচারের এক মামলায় তাকে পলাতক দেখিয়ে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। আর জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন জজ আদালত। ওই মামলায় রায়ের পর এখন কারাগারে আছেন তারেক রহমানের মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমানই পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে লন্ডন থেকে দল পরিচালনায় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দণ্ডিত আসামি তারেক রহমানকে ‘যেভাবেই হোক’ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। যে অপরাধী সাজাপ্রাপ্ত, সে কী করে এখানে থাকে? কাজেই তাকে তাড়াতাড়ি ফেরত দিন।’ ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও কথা বলেন, যা নিয়ে দেশে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে গতকাল সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তারেক জিয়া বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট হাইকমিশনে জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। সেই তারেক রহমান কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন?
এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ওই ‘উড়ো ও অবান্তর’ বক্তব্যের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাকলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেই পাসপোর্ট দেখাতে আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা কথা বলেছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন। হাইকমিশন তো সরকারের অধীনেই, তাদের বলুন সেটি দেখাতে।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তানকে নিয়ে ‘এমন অসত্য, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বক্তব্যে দেশে-বিদেশে সমাজিক ও রাজনৈতিকভাবে তার ‘সম্মান ও মর্যাদাহানি’ ঘটানো হয়েছে। ‘নোটিসে আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট জমা ও নাগরিকত্ব বর্জন-সংক্রান্ত বক্তব্যের যথাযথ প্রমাণ দিতে বলেছি। প্রমাণ দিতে না পারলে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। না হয় তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মামলা করা হবে।’
এই আইনজীবী আরও বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ‘ভিত্তিহীন বক্তব্যের’ বরাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন ওই সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে দুটি পত্রিকাকে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে তারেক রহমানের আইনি নোটিস
