পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এমসিসিআই’র সভায় অভিমত: অনিশ্চয়তার দিকে বিশ্ববাণিজ্য পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের সর্বত্র এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ব্যবসার কথা বললেই মানুষের সামনে আসছে অনিশ্চয়তা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রটেকশনিজম নতুনভাবে বিশ্ববাণিজ্যের জন্য অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের জন্য। এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিশ্বঅর্থনৈতিক ফোরাম সভায়। বাংলাদেশকে এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বাস্তবতা উপলব্ধি করে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন ডাভোস ২০১৭: কিছু অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল রোববার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্বঅর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম সভা থেকে অর্জিত বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও আগামীর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়।

এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, পানি সংকট নিরসন ও টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বঅর্থনৈতিক ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রফতানিমুখী অর্থনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, চামড়া, ওষুধ, জাহাজ নির্মাণসহ বিভিন্ন খাত এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী একটা বাজার তৈরি করেছে। এই পণ্যগুলোর বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের বিশ্বঅর্থনৈতিক ফোরামে চারটি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তা হলো: অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নেতৃত্বের ভূমিকা, বাজার ব্যবস্থায় সবার অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং চতুর্থ প্রজন্মের শিল্পবিপ্লব। চতুর্থ প্রজন্মের শিল্পবিপ্লব মূলত বিশ্বের দেশগুলোকে একটি নতুন ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে এসেছে। এটি বিশ্বকে একটা সীমানাবিহীন অঞ্চলে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় প্রযুক্তি, উদ্যোক্তাবোধ ও আধুনিকায়নের এজেন্ডা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। ডাভোস সম্মেলন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় কোনো সমাধান না দিলেও প্রয়োজনীয় ধারণা, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ এনে দিয়েছে।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপলব্ধি করে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া জরুরি। সেটা না পারলে অভ্যন্তরীণ সাফল্য কাজে আসবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সমস্যা নতুন নয়। অবকাঠামো ও দক্ষতার অভাব, সরবরাহ ও সেবা প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা, কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে আমাদের আগের প্রজন্মের ও এমসিসিআই নেতারা কথা বলতেন। এখন আমরাও বলছি। কিন্তু উন্নয়ন হচ্ছে না। এবার আমরা খানিকটা আশাবাদী। আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন করা দরকার। নীতিনির্ধারণে নানা ধরনের বাধা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।’

এসব সমস্যা সমাধানে তিনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও স্থায়ী প্ল্যাটফরম গঠনের আহ্বান জানান।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার মো. রিয়াজ হামিদুল্লাহ, বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম মশহুর, এইচএসবিসি ব্যাংক বাংলাদেশের সিইও ফ্রান্সিস ডি ম্যারিকর্ট, টেকনো হেভেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহ এন করিম, ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরান বকর, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ফারুক সোবহান, বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘অর্থনৈতিক ফোরামের গত বছরের মতো এবারও ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: আবহাওয়া-জলবায়ুর অভিঘাত, বিরাট সংখ্যায় অভিবাসন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো বিষয়। এর মোকাবিলায় বেশকিছু অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ডাভোস আমাদের ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনার শিক্ষা দিয়েছে। আমাদের বৈশ্বিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। বিশ্ব এখন আর জাতীয় রাষ্ট্রভিত্তিক অবস্থায় নেই। এখন আমরা রাষ্ট্রগুলোর একটা নেটওয়ার্কের দিকে ধাবিত হচ্ছি। এ অবস্থায় কিছু মৌলিক নীতির ভিত্তিতেই আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০