সাইফুল্লাহ আমান: কক্সবাজার জেলার মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকায় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল স্থাপন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এজন্য পরামর্শক নিয়োগের দায়িত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ খাতের নীতি গবেষণা বিষয়ক সংস্থা পাওয়ার সেল। যদিও পাওয়ার সেল জ্বালানি বিষয়ে খুব একটা কাজ করেনি।
পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী ও মাতারবাড়ীতে ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই এবং টার্মিনাল ডেভেলপার নির্বাচন পর্যন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের এই দায়িত্ব দেয়া হয় বিদ্যুৎ খাতসংক্রান্ত এ প্রতিষ্ঠানটিকে।
গত ১৯ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যদিও এর আগে এই টার্মিনাল নির্মাণে পরামর্শকের দায়িত্ব আরপিজিএল ও পেট্রোবাংলাকে দেয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগ্রহপত্র বা এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই দায়িত্ব দেয়া হয় পাওয়ার সেলকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আনিছুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, পাওয়ার সেল প্রায় আড়াই বছর আগে জ্বালানি খাতে এ ধরনের একটি কাজ করে দিয়েছিল। তাই তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই এ দায়িত্ব পাওয়ার সেলকে দেয়া হয়েছে।
তথ্যমতে, প্রস্তাবিত এই এলপিজি টার্মিনাল হবে রেফ্রিজারেটেড মাদার টার্মিনাল। এই টার্মিনাল থেকে এলপিজির বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বাল্ক আকারে এলপি গ্যাস বিক্রি করা হবে। পরবর্তী সময়ে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করা হবে এবং বোতল উৎপাদন কারখানা স্থাপন করার বিবেচনা করার কথাও বলা হয়।
টার্মিনালটির অপারেশন ক্ষমতা হবে প্রতি বছর ১০-১২ লাখ মেট্রিক টন। এই টার্মিনালের জেটিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার রেফ্রিজারেটেড এলপি গ্যাস বহনকারী জাহাজ নোঙর করার ব্যবস্থাসহ মজুত ক্ষমতা থাকবে কমপক্ষে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পরে এই এলপিজি টার্মিনাল থেকে ১৫০০-৪০০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজে বাল্ক এলপি গ্যাস দেশের গ্যাস কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করা হবে।
গত ২ ডিসেম্বর বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীকের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে পরামর্শক নিয়োগে পাওয়ার সেলের অভিজ্ঞতা আছেÑউল্লেখ করে পরামর্শক নিয়োগের দায়িত্ব পাওয়ার সেলকে দেয়ার সুপারিশ করা হয়। টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিপিসির পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞতা না থাকায় পাওয়ার সেলকে এই সম্ভাব্যতা যাচাই ও টার্মিনাল উন্নয়ন নির্বাচক পর্যন্ত কাজের পরামর্শক নিয়োগে পাওয়ার সেলকে এই দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয় ওই চিঠিতে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ হোসাইন বলেন, এরকম একটি প্রস্তাব আমাদের দেয়া হয়েছে। তবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ‘বিষয়টি এখনও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিপিসি ও পাওয়ার সেল যৌথভাবে এই পরামর্শক নিয়োগের কাজ করবে।’
উল্লেখ্য, দেশে আবাসিক গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকায় প্রতি বছর এলপিজির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ২০১১ সালে দেশে এলপিজির আমদানি হয়েছিল এক লাখ মেট্রিক টনেরও কম। তবে ২০২০ সালে তা ১৪ গুণ বেড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে এলপিজির ব্যবহার হলেও এরপর থেকে জ্যামিতিকভাবে বেড়ে যায় এই তরল গ্যাসের ব্যবহার।
গতকাল এলপিজি দাম-সংক্রান্ত এক সভায় জানানো হয়, প্রতি বছর এলপিজি খাত ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে। ২০১২ সালে ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়া এই খাতে ২০১৬ সালে এসে তা ১০০ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে ১২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এরপর কিছুটা কমলেও ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। ২০২৫ সালে এলপিজি আমদানির পরিমাণ ৩০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
জাইকার এক গবেষণায় দেখানো হয়, ২০২০ সালে এলপিজি ব্যবহার আবাসিক এলাকায় ৫ হাজার মেট্রিক টন হলেও ২০৪১ সাল নাগাদ এর ব্যবহার ১৬ হাজার মেট্রিক টন হবে বলা হয়।
এলপিজি ব্যবসায় বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৫৬টি কোম্পানি লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি কোম্পানি এখন ব্যবসা করছে ও ২০টি কোম্পানি এলপিজি আমদানি শুরু করেছে। দেশের কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।