Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 12:18 pm

পরিকল্পনা কমিশনের রুটিন কাজে ওএসডির খড়্গ

মাসুম বিল্লাহ: গত ১ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের ২২০ কর্মকর্তাকে উপসচিব হিসেবে ডিএস পুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পরের দিনই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার উপযুক্ত ১৪৪ জনকে যুগ্ম সচিব হিসেবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। আর ৩ সেপ্টেম্বর ২৩ জনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়। কিন্তু পদোন্নতি দেওয়া হলেও তাদের নতুন কর্মস্থলে পদায়ন করা হয়নি। সবাইকেই বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ওএসডি হয়ে থাকায় পরিকল্পনা কমিশন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

প্রায় দুই বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর প্রশাসন ক্যাডার ও ইকোনমিক ক্যাডারকে একীভূত করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রথমে ২৭ থেকে ৩৬তম বিসিএস পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের একীভূত করা হয়। তাদের অধিকাংশ অফিসারকে শাহবাগে প্রশাসন একাডেমিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠ প্রশাসনে পদায়ন করা হয়েছে। আর কিছু কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত।

কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদায়ন সহজভাবে হয়ে গেলেও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একীভূতকরণ নিয়ে নানামুখী জটিলতা দেখা দিতে থাকে। দুই ক্যাডারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শেষে চলতি মাসের শুরুতে সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ইকোনমিক ক্যাডারের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূতকরণ সম্পন্ন হয়। কিন্তু একীভূতকরণ সম্পন্ন হলেও ১ সেপ্টেম্বর যে ২২০ কর্মকর্তাকে ডিএস পুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাদের সবাইকেই ওসএডি রাখা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার অর্ধেকেরই বেশি পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত। অন্যরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা উইংয়ে কর্মরত। নতুন করে পদায়ন না করায় তারা কোনো ফাইলে সই করতে পারছেন না। অনেকে পেছনের তারিখে (ব্যাক ডেট) ফাইল অনুমোদন করছেন। পদোন্নতির পর ১০ দিনের বেশি পেরিয়ে যাওয়ার পরও কর্মকর্তাদের পদায়ন না করায় দৈনন্দিন কাজে জটিলতা দেখা দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের কি ইন-সিটু পদায়ন করা হবে, নাকি অন্য কোথাও পদায়ন করা হবেÑসে বিষয়ে এখনও কোনো কিছু স্পষ্ট করা হয়নি। ওএসডি থাকার ফলে কোনো ফাইল দেখতে পারছি না। বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’

গত ১ সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার ২২০ কর্মকর্তাকে উপসচিব হিসেবে ডিএস পুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের সবাইকে ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে সরকার। ওই সময় এ-সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়েছিল, সরকারি কর্ম কমিশনের সমন্বিত মেধা তালিকা অনুসারে ডিএস পুলে যোগদানকারী ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নিজ নিজ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্ধারিত হবে। সে মোতাবেক ডিএস পুলে অন্তর্ভুক্ত ২২০ কর্মকর্তাকে প্রশাসন ক্যাডারে তাদের নিজ নিজ ব্যাচের কর্মকর্তাদের সমান্তরাল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় গত ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর।

কর্মকর্তারা ওএসডি হয়ে থাকায় কী ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল রূপরেখা বর্ণিত থাকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। বর্তমানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্তকরণ কার্যক্রম চলমান। এমন পরিস্থিতিতে জিইডির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ওএসডি হয়ে পড়ায় রুটিন কার্যক্রম নিয়ে খুব বিপদে আছি। এসব কর্মকর্তাকে যদি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলেও সমস্যা দেখা দেবে, কারণ নতুন কর্মকর্তা এলে বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে তাদের সময় লাগবে। তাই অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত জিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইন-সিটু পদায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধও জানিয়েছি।’

একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য বিভাগেও। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে সনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত কার্যক্রম বিভাগ। প্রকল্পগুলোর অর্থের বরাদ্দ নির্দিষ্ট করে এ বিভাগটি। বেশিরভাগ কর্মকর্তা ওএসডি থাকায় এ বিভাগের কার্যক্রমও বিঘিœত হচ্ছে। এছাড়া ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ, কৃষি পল্লি প্রতিষ্ঠান ও পানিসম্পদ বিভাগ এবং শিল্পশক্তি বিভাগের কার্যক্রমও বিঘিœত হচ্ছে। এ পরিস্থিতির আশু সমাধান চান সংশ্লিষ্টরা।