পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন ড. শামসুল আলম, শপথ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে চলেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদ্য সাবেক সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম। আগামীকাল রোববার বঙ্গভবনে তার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ভিত্তিতে দীর্ঘ ১২ বছর তিনি সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ৩০ জুন তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় যুক্ত হচ্ছেন তিনি। গতকাল সকালে ড. শামসুল আলম শেয়ার বিজকে তার প্রতিমন্ত্রী পদে নিয়োগ ও শপথের তথ্য নিশ্চিত করেন।

ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে জিইডিতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেটি আমি সুচারুরূপে পালন করার চেষ্টা করেছি। তিনি আমাকে নতুন যে দায়িত্ব দিচ্ছেন, সেই দায়িত্বও শতভাগ পালন করার বিষয়ে আশাবাদী। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার প্রধান কাজ হবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়ানো।

দীর্ঘ ৩৫ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা শেষে প্রেষণ ছুটিতে ড. শামসুল আলম ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগ দেন এবং চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সৃষ্টির পর সদস্য হিসেবে ড. আলমই সবচেয়ে দীর্ষ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। ড. শামসুল আলম ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতির ১০ শতাংশ কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিব্যবসা ও বিপণন বিভাগে দীর্ঘ ৩৫ বছর অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনে তার প্রাপ্ত প্রথম দায়িত্বের মধ্যে ছিল দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১), সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে সংশোধন পুনর্বিন্যাস করা। সংশোধিত সেই দলিল ‘দিন বদলের পদক্ষেপ’ জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে ২০১০-১১ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১), ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫), সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২৫) ড. আলমের নেতৃত্বে ও অংশগ্রহণে প্রণীত হয়। পরিকল্পনা কমিশনে ড. আলমের কার্যকালীন সময়ে অন্যসবের মধ্যে বাংলাদেশে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনবিষয়ক ১৫টি গ্রন্থ, এসডিজি বিষয়ক ২৫টি প্রতিবেদন ও মূল্যায়ন গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২১) এবং বাংলাদেশের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র (এনএসএসএস) ড. আলমের নেতৃত্বে (২০১৫-২৫) প্রণীত হয়েছে। ড. আলমের অংশগ্রহণে ও নেতৃত্বে শতবর্ষী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণীত হয়েছে (২০১৮)। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে কার্যকালীন সময়ে তাঁর তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় এ পর্যন্ত গত ১২ বছরে ১১৫টি মূল্যায়ন প্রতিবেদন, অধ্যয়ন ও গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে শামসুল আলম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। ড. শামসুল আলম ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি, ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ অর্থনীতি এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতায় ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপনা জীবনে ড. আলম ২০০৮ সালে জার্মানির হোমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় অংশ নেন। প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবেও কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০