পরিচালকদের চাপে টিকতে পারছেন না এমডিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্বৃত্তরা ব্যাংক খাতে ঢুকে এখন এ খাতকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দুর্বৃত্ত মালিকদের মধ্যেও আছে। যাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকারদের কাজ করতে হয়। এদের চাপে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) পদত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই দুর্বত্তদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘লোন টেকওভার ইন বাংলাদেশ : ইজ ইট অ্যা হেলদি প্রাকটিস’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরী।

গোলটেবিল বৈঠকে ঋণ হস্তান্তরের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ সোহেল মোস্তফাসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছেন, পরিচালনা পর্যদের অযৌক্তিক ব্যবসায়িক চাপে ঋণ হস্তান্তরে মন্দচর্চা চলছে।

এতে আরও বলা হয়েছে , যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ হস্তান্তরের কারণে এ ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। ৯০ শতাংশ ব্যাংকারের মতে, হস্তান্তরিত ঋণ বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে।

বৈঠকে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তরা এখন ব্যাংক খাতে ঢুকে পড়েছে। কেননা তাদের যখন অনেক টাকা হয়ে যায়, তখন তারা একটি ব্যাংক পেয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাংকে গত তিন বছরে তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন ৯ মাস ধরে কোনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই থেকে চার লাখ টাকা দিলে এমডি পাওয়া যাবে, কিন্তু ব্যাংক চালানোর মতো যোগ্য লোক পাবেন না। উচ্চশিক্ষিত ভৃত্য পাওয়া যাবে, যারা গৃহভৃত্য।’

মেঘনা ব্যাংকের এমডির পদত্যাগের বিষয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘মালিক বা পরিচালকদের চাপের কারণে মেঘনা ব্যাংকের এমডি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। যত দূর শুনেছি, মালিকদের ইচ্ছে অনুযায়ী ঋণ না দেওয়ার কারণে তাকে বের হতে বাধ্য করা হয়েছে।’

ব্যাংকের লোন টেকওভারের (ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ হস্তান্তর) বিষয়ে  তিনি বলেন, ‘নীতিমালার চেয়ে বড় বিষয় হলো মানুষের উন্নয়ন করা। মানুষ ভালো হলে নীতিমালার দরকার নাই।’

ব্যাংকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কথা বললে চাকরি যাওয়ার ভয় আছে। এক্ষেত্রে আপনারা সংবাদকর্মীদের সহায়তা করতে পারেন। এভাবেই ব্যাংক খাতের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত ইসলাম বলেন, ‘ঋণ হস্তান্তরের অনেক খারাপ দৃষ্টান্ত আছে। কিছু গ্রাহক ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য সরকারি ব্যাংককে টার্গেট করে। তারা বিভিন্ন কায়দাকানুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা আর পরিশোধ করেন না।’

তিনি বলেন, ‘ঋণ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, তা ব্যাংক খাতের জন্য ক্ষতিকারক। এটি বন্ধ করতে হবে। যে গ্রাহকের ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা ১০ কোটি টাকা তাকে ২০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।’

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ হস্তান্তরের সময়ে সব বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে হস্তান্তর করতে হবে।’

বৈঠকে বক্তারা বলেন, লোন টেকওভারের (ঋণ হস্তান্তর) ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা করতে হবে। ঋণ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানছে না ব্যাংকগুলো। এখানে একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।

সরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকের খেলাপি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ খাতের ব্যাংকগুলোর ভালো গ্রাহকদের বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি বাড়ছে। তাই গাইডলাইন ছাড়া কোনোভাবেই ঋণ হস্তান্তরের অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০