জয়নাল আবেদিন: পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতায় প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট (পিএফআই) লিমিটেড থেকে বেরিয়ে গেছে অর্ধশত কোটি টাকা। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে বিতরণ করা বড় বড় ঋণ। পাশাপাশি ঋণ পুনঃতফসিলে অনিয়েমের চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শনে। আর্থিক খাতকে বাঁচাতে এরকম দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত পুনর্গঠনের পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জামানত ছাড়াই ৫১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে পিএফআই, যার সবই বর্তমানে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ঋণটি বিতরণের ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া গেছে পরিচালকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বিআইএফসিসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো আমানতকারীর আস্থা হারিয়েছে পিএফআই। তবে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে বিতরণের প্রায় ১৫ শতাংশ।
অতীতে অনিয়মিত ছিল এরকম ২৩টি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে প্রাইম ফাইন্যান্স। সেই ?ঋণের সিংহভাগ কিস্তি এখনও অনিয়মিত। এ ধরনের পুনঃতফসিলীকরণ শুধু প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণিকরণের হার কমানো এবং প্রভিশন কম রেখে আয় বাড়ানোর অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুনর্গঠনকৃত ঋণগুলো আবার বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়েছে। শুধু প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের হার কমানো এবং প্রভিশন কম রেখে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এগুলো পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে পরিদর্শন দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন ভেঙে পিএফআই প্রোপার্টিজ, সৈয়দ তৈয়বুল বাশার, সৈয়দ আবতাবুল বাশার ও মেসার্স আশিক’সকে সর্বোচ্চ সীমার অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা দেয় প্রাইম ফাইন্যান্স, যার পুরোটাই এখন বিরূপ মানের শ্রেণিকৃত ঋণ। এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন চেয়ারম্যান কেএম খালেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খানের সংশ্লিষ্টতা পরিদর্শন দলের কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে। এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বর্তমান চেয়াম্যান মাসুদুর রহিম এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে জানান, ‘ঋণ বিতরণ ও খেলাপির সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটুকু বলতে চাই, আগের তুলনায় প্রাইম ফাইন্যান্স এখন অনেক ভালো করছে। করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা ধাক্কা খেলেও আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি আমরা। শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠান নয়, করোনার কারণে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান কবির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) শহীদ ইসলামের কাছে সবকিছু জানতে বলেন। শহীদ ইসলাম জানান, ৫১ কোটি টাকার খেলাপির বিষয়টাও পুরোনো। সেই ঋণের আদায় প্রক্রিয়া চলমান। কিছু অংশ আদায়ও হয়েছে। বর্তমানে প্রাইম ফাইন্যান্স আগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এখন কোম্পানিটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১৫ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, প্রাইম ফ্যাইন্যান্সের মতো ঘটনা এর আগে দেখা গেছে পিপলস লিজিংয়ের ক্ষেত্রে। গত বছরের জুলাইয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় চরম সংকটে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে অর্থ
মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন দেয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি ফের চালু করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। নতুন নামে এবং নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি শিল্পগ্রুপ আলোচনা করছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন শর্তে তাদের সঙ্গে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দর কষাকষিও চলছে।