পরিচালকদের ব্যর্থতায় এফডিআরে যাচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ

যখন একটি মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যু হয়, তখন অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য থাকে। অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা কোথায় ব্যবহার করা হবে। এই মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনায় যারা রয়েছেন, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তাদের ব্যর্থতার কারণেই মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা এফডিআরে চলে যাচ্ছে। এই ফান্ড কোনোমতে এফডিআরে যাওয়ার কথা নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও সালেহ আহমেদ, বালি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক মো. আরিফুর রহমান এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহমুদ হোসেন।
সালেহ আহমেদ বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে অবস্থা, এটিকে ভালো বলা যায় না। আসলে পুঁজিবাজার এরকম অবস্থায় থাকার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত চীন ও আইসিবির যে টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটি আশানুরূপ নয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সামনে নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছেন। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, যেসব শেয়ারের দাম বাড়ার কথা, তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে।
মো. আরিফুর রহমান বলেন, একটি দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড হচ্ছে ওই দেশের পুঁজিবাজারের প্রাণ। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে তেমন ভালো মিউচুয়াল ফান্ড আসে না; আর বর্তমানে যেগুলো বাজারের আছে, সেগুলোও তেমন ভালো মানের নয়। যেগুলো আছে, তারা টাকা সংগ্রহ করে এফডিআর করে রাখে এবং তাদের বেশিরভাগেরই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নেই। এজন্যই মিউচুয়াল ফান্ডের এরকম অবস্থা। এখন কথা হচ্ছে, একটি দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের কাজ কী? যখন পুঁজিবাজারে উত্থান-পতনে সীমা থাকে না, তখন পুঁজিবাজারে স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখাই মিউচুয়াল ফান্ডের কাজ। বিশেষ করে আইসিবির মতো। কিন্তু পুঁজিবাজারের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে যখন একটি কোম্পানি এজিএম ও লভ্যাংশ ঠিকভাবে দিতে পারে না, তখনই ওই কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়। আসলে এটিকে শাস্তি হিসেবে ভাবা হয় কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ওটিসি মার্কেটে যাওয়া মানে পুরস্কৃত হওয়া। ওটিসি মার্কেটে পাঠানোর মানে তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। আসলে এসব দেখার কেউ নেই।
মো. মাহমুদ হোসেন বলেন, যখন একটি মিউচুয়াল ফান্ড ইস্যু হয়, তখন কিন্তু কিছু উদ্দেশ্য থাকে। অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা কোথায় ব্যবহার করা হবে। এই মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনায় যারা রয়েছেন, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তাদের ব্যর্থতার কারণেই মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা এফডিআরে চলে যাচ্ছে। এই ফান্ড কোনোমতেই এফডিআরে যাওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এ খাতে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে এবং তার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশের আইটি খাত সম্ভাবনাময় এবং অনেক আইটি কোম্পানি ভালো করছে। এখন কথা হচ্ছে, পুঁজিবাজারে যেসব নতুন আইটি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, তারা বিগত সালে যে ইপিএস দেখিয়েছেÑতা যথার্থ কিনা এবং এরা যে মূল্য নির্ধারণ করছে, সেটি সঠিক হচ্ছে কিনা; অর্থাৎ এ বিষয়গুলো বেশিরভাগ সময় দেশের পুঁজিবাজারে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব সময় বলে থাকে, বিষয়গুলো ইস্যু ম্যানেজার ও অডিট ফার্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দিয়েছে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আসলে কিন্তু তা ঠিক নয়। যেহেতু তাদের কাছ থেকেই সিদ্ধান্ত আসে, সেক্ষেত্রে দায়িত্বটা তাদের ওপরই বর্তায়। দেখা যায়, এসব কোম্পানি বাজারে আসার পর পাঁচ টাকার শেয়ার ২৫ টাকা হয়ে যায়; আবার ২৫ টাকার শেয়ার এক বছরের মধ্যে দুই টাকায় নেমে আসে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আরেকটি বড় বিষয় হলো, দেশে অনেক আইন আছে কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন হয় না। এখানেই বড় সমস্যা। অর্থাৎ একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে আইন বা পলিসিগত নিয়ম-কানুন রয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করছে কিনাÑসে ব্যাপারে কোনো কথা হয় না। যদি কেউ এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনও, সেটিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমলে নেয় না বা প্রয়োজন বোধ করে না। বিষয়গুলো ক্যাপিটাল মার্কেটে বেশি দেখা যাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে বিএসইসিকে ‘এএএ’ র‌্যাংকিং করা হয়েছে। এটি আনন্দের বিষয়। কিন্তু ‘এএএ’ ক্যাটেগরি ঘোষণার আগে বা পরে পুঁজিবাজারে কি উন্নতিসাধিত হয়েছে, তা ভাবার বিষয়। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার কথা কিন্তু তা আরও কমেছে। স্বল্প মূলধনি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গুটিকয়েক ব্যক্তি কারসাজি করছে; এদের ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। চীনা কনসোর্টিয়াম আসা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে আস্থা ফিরে আসেনি। এভাবে চলতে থাকলে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে যাবে বলে আশা করা যায় না।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০