ডিএসইর সাপ্তাহিক চিত্র

পরিচালকের ন্যূনতম শেয়ার ধারণে বাধ্যবাধকতায় বাড়ছে লেনদেন

শেখ আবু তালেব: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে চলছে কিছুটা স্বস্তির বাতাস। একটানা তৃতীয় সপ্তাহেও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় চলছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। বিনিয়োগের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ। লোকসানে থাকা বিনিয়োগকারীরা আশা বাঁধছেন হারানো মূলধন ফিরে পাওয়ার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিচালকদের ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কঠোর ভূমিকা বাজারে প্রভাব ফেলেছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহেও দেশের পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করেছে, যা একটানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরেই ইতিবাচক হলো। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাজার মূলধন।

আলোচিত সপ্তাহেও ডিএসইতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল টেলিকম, ব্যাংক, বিমা, প্রকৌশল, ওষুধ খাতের শেয়ারে। গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ মুনাফা নিয়েছেন টেলিকম খাতের বিনিয়োগকারীরা।

তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৬১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সপ্তাহ শেষে শেয়ারদর বেড়েছে ২৮২টির বা ৭৮ শতাংশের, কমেছে ১৬ শতাংশ বা ৫৯টি কোম্পানির; অন্যদিকে অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির। এই সময়ে লেনদেন হয়নি দুটির।

আলোচিত সময়ে চার হাজার ৫০৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার মূল্যের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট হাতবদল হয়। আগের সপ্তাহে যা ছিল দুই হাজার ৯০৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার। এ হিসাবে প্রায় দেড়গুণ লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে আলোচিত সপ্তাহে।

জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত সপ্তাহে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পরিচালকদের ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার থাকার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রেই তা নেই। পরিচালক পদ ধরে রাখতে হলে তাদের নতুন করে শেয়ার বাড়াতে হবে। শেয়ার বৃদ্ধির প্রধান উপায় হচ্ছে ক্রয়।

এতে পুঁজিবাজারে শেয়ার ক্রয় বৃদ্ধি পাবে। এই ধারণায় বিনিয়োগকারীরা ওইসব কোম্পানিতেও বিনিয়োগ শুরু করেছেন। আবার অপর এক সিদ্ধান্ত হচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির লেনদেনে টি+৩তে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

এছাড়া সব স্পন্সর ও বর্তমান পরিচালকদের ধারণকৃত শেয়ার বিক্রয়, হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং প্লেজ বন্ধ থাকবে। ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোক ছয় মাসের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে হবে। বিএসইসি শর্ত মানতে না পারলে এসব কোম্পানির পরিচালকরা পুঁজিবাজারের অন্য কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না কোনো দিন।

এসব সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। এর সঙ্গে রয়েছে অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ। বিশ্লেষকদের মতে, ক্রমাগত নেতিবাচক ধারায় চলে আসা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। এখনও অনেক শেয়ারের দর স্বাভাবিক দরে ফেরেনি। সবদিক বিবেচনায় বিনিয়োগের উত্তম সময় এখন। মূল ধারার বিনিয়োগকারীরা এটিকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। সামর্থ্য অনুযায়ী অনেকেই বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। এর ফলে বাড়ছে লেনদেন। এ অবস্থাকে ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আস্থায় আনতে হবে বিনিয়োগকারীদের।

জানা গেছে, গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল চার হাজার ৩৬৪ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের শুরুতে সূচকটির অবস্থান ছিল চার হাজার ৭০৩ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। সপ্তাহের ব্যবধানে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা সাত দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া লেনদেন ও শেয়ারদর বৃদ্ধিতে ডিএসই বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ২১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে সর্বোচ্চ গেইনার ছিল পাট খাতের বিনিয়োগকারীরা। খাতটি থেকে আলোচিত সময়ে ১৬ দশমিক দুই শতাংশ গেইনার করে তারা। এরপরই টেলিকম খাত থেকে ১৩ দশমিক চার শতাংশ, ব্যাংক খাত থেকে ১৩ দশমিক এক শতাংশ, এনবিএফআই থেকে ১১ দশমিক ছয় শতাংশ, সিরামিক ৯ দশমিক দুই শতাংশ, সিমেন্ট আট দশমিক ছয় শতাংশ, প্রকৌশল সাত দশমিক ছয় শতাংশ মুনাফা দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা।

অন্যদিকে এই সময়ে জীবন বিমা খাতে এক শতাংশ লোকসান দেখে আগের সপ্তাহের চেয়ে। আলোচিত সময়ে খাতভিত্তিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ১৭ দশমিক ছয় শতাংশ অবদান রাখে ওষুধ খাত। এর পরই ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ সাধারণ বিমা, ১১ দশমিক সাত শতাংশ প্রকৌশল ও ১০ দশমিক সাত শতাংশ ব্যাংক খাত।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে শেয়ারদর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে স্টাইল ক্রাফট। কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৩৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এরপরই নাম উঠে ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি ও নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের।

অপরদিকে একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে শেয়ারদরে লোকসানের শীর্ষে উঠে আসে সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড। এরপরই আরগন ডেনিমস ও ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০