নিজস্ব প্রতিবেদক:রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ছয়গুণ বেশি। ব্যাংকটি ৫২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথমার্ধে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে। রূপালী ব্যাংকের ষাণ¥াসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে বা অর্ধবার্ষিক হিসাব সমাপনীতে পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের (২০২২ সালে) একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল মাত্র ৫৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ছিল ২৮ কোটি টাকা। এছাড়া গত ১০ মাসে ব্যাংকটির ঋণ ও আমানতের পরিমাণও বেড়েছে।
সূত্র জানায়, মূলত সুদ ও ট্রেজারি থেকে আয় ও আদায় বাড়ায় ব্যাংকটি বছরের প্রথমার্ধে এই মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণে জোর দিয়েছে ব্যাংকটি। অর্থাৎ কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) জন্য ঋণ বাড়িয়েছে। এছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যে জোর দেয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্স আহরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ব্যাংকটি। এসব কারণে ব্যাংকের এই অর্জন।
শুধু ঋণ দেয়া নয়, আদায়েও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত যেখানে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল, চলতি বছর (২০২৩ সালে) সেখানে নগদ আদায় হয়েছে ৩২৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটির কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঘোষিত ১০০ ও ১৫০ দিনের বিশেষ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে এ সাফল্য এসেছে।
জানা গেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেন। এরপর ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ সময় ঋণ বেড়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির আমানত দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকায়, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে যখন চারদিকে নানা নেতিবাচক খবর, তখন রূপালী ব্যাংকের এই অর্জন ব্যাংকগুলোর প্রতি সাধারণ জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোও দ্রুত তালিকাভুক্ত করা উচিত। এতে করে তারাও জবাবদিহির আওতায় আসবে এবং রূপালী ব্যাংকের মতো ভালো করার তাগিদ অনুভব করবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রূপালী ব্যাংকের ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকার। বাকি ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক এবং ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। সরকারি ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৭০০ কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ৪৬৪ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৫৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
