মেহেদী হাসান: সদ্য বিদায়ী ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেশ বেড়েছে। বিদায়ী বছরে যদিও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল, তবে ব্যাংক খাতে ছিল নানা ধরনের অস্থিরতা। এ খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। এর মধ্যেই ব্যাংকগুলো বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করেছে।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণের বিপরীতে সুদ হিসাবই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বাড়িয়ে দিয়েছে। ঋণ নবায়নে বিশেষ ছাড় ও পুনর্গঠন করা ঋণ নিয়মিত থাকারও প্রভাব পড়েছে মুনাফায়।
জানা গেছে, এখন ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রাথমিক হিসাব। চূড়ান্ত হিসাব শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে সঞ্চিতি ও কর কেটে প্রকৃত মুনাফা পাওয়া যাবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর কর কেটে রাখা হবে ৪০ শতাংশ; অন্যগুলোর সাড়ে ৪২ শতাংশ ও নতুন ব্যাংকের ৪০ শতাংশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী ২০১৭ সাল শেষে সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। এ সময় ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফার পরিমাণ দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে যেখানে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল দুই হাজার তিন কোটি টাকা। এরপরই এক হাজার ২১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এর আগের বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল এক হাজার ১০১ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৯১৫ কোটি টাকা; আগের বছর ছিল ৭২০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি মালিকানা পরিবর্তন হওয়া সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০১৭ সালের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৬০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৬০৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক এ বছর ৫১১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা ব্যাংকটির এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মুনাফা।
নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে বছর শেষে ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৩০ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ২০০ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০২ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ১৭২ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৮২ কোটি টাকা, যা পূর্বের বছর ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের মুনাফা ১৬১ কোটি টাকা, যা আগের
বছর ছিল ৯৮ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৫১ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৯২ কোটি টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংকের মুনাফা ১২০ কোটি টাকা, আগের বছর ছিল ৭২ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ১১০ কোটি টাকা, আগের বছর করেছে ১০২ কোটি টাকা।
এদিকে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭১১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে যা ছিল ৬৯০ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ ৪৫০ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক ৫৩৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আগের বছর যা ছিল ৪৭০ কোটি টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫০৪ কোটি টাকা, আগেরর বছর যা ছিল ৪৩০ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়া ৬৭০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আগের বছর ছিল ৫৯০ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণী ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফা করেছে ৯৫০ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া সিটি ব্যাংক ৬৯০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, আগের বছর যা ছিল ৭৬০ কোটি টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মুনাফা ৭৫০ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৬৩০ কোটি টাকা। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৩১৪ কোটি টাকা। এর বাইরে জনতা ব্যাংক এক হাজার কোটি টাকা, এনআরবি ব্যাংক ৯৭ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৪১৭ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ৭৫০ কোটি টাকা, ফারমার্স ব্যাংক ২৬ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৩৬০ কোটি টাকা ও যমুনা ব্যাংক ৪৮৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ সুদ কমিয়েছে, আমানতের ক্ষেত্রে তারচেয়ে বেশি কমিয়েছে। যদিও মাঝামাঝিতে ঋণ ও আমানতের সুদহার (স্প্রেড) কিছুটা কমেছিল। কিন্তু শেষদিকে এসে তা আবার বেড়ে গেছে। এ কারণেই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
জানা গেছে, এই পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেওয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশনের পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরও কমবে। এদিকে ব্যাংকগুলোকে গত বছরের পরিচালন মুনাফা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে।
ব্যাংকগুলো বলছে, সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। আমদানি খাতও অনেক গতিশীল ছিল। এছাড়া সার্ভিস চার্জ থেকেও মুনাফার একটি বড় অংশ এসেছে। এগুলোর প্রভাব মুনাফার ওপর পড়েছে।