Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:09 pm

পরিত্যক্ত জমিতে সমন্বিত মৎস্য খামার

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার হয়বাতপুর গ্রামে একটি সমন্বিত মৎস্য খামার করা হয়েছে। কৃষক হারুন অর রশীদ জঙ্গল কেটে সমন্বিত মৎস্য খামারটি গড়ে তোলেন। খামারটি এখন গ্রাম ছাড়িয়ে গোটা জেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। খামারে মাছ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও সবজি চাষ করা হয়েছে। এখান থেকে মাছ, ফল ও সবজি বিক্রি করে বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এতে কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছেন এলাকার বেকার যুবকরা। এখন এমন খামার তৈরিতে অনেকে উৎসাহিত হচ্ছেন।

২০১৪ সালে ১৬ একর জমি কিনে ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করেন হারুন অর রশীদ। ১২ একরের চারদিকে মাটি দিয়ে বেড়ি তৈরি করে তিনি মাছের ঘের তৈরি করেন। এখানে রুই, কাতল, সিলভারকার্প, চিতল, পাঙ্গাস, থাই পুঁটি ও শিংমাছের চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ঘেরের পাশে গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান। এর মধ্যে রয়েছে আম, মাল্টা, আমড়া, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে ও কলা। ঘেরের আইলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সবজিÑলাউ, করলা, বেগুন ও বোম্বাই মরিচ। শুধু তা-ই নয়, এখানে পালন করা হচ্ছে দেশি জাতের গরুও।

সমন্বিত এ খামারে কাজ করে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন স্থানীয় অনেক যুবক। এখানের আয় দিয়েই সংসার চলছে অর্ধশত পরিবারের। এলাকার মানুষ এখন এমন খামার করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন খামারটি দেখতে আসে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। এখানে নতুন করে লাগানো হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য নিরাপদ ভিয়েতনামের খাটো জাতের শতাধিক নারিকেল চারা।

খামারের পরিচালক বেলায়েত হোসেন বলেন, হয়বাতপুর গ্রামের এ এলাকাটি ছিল জঙ্গলে ভরা। আমরা অল্প দামে জমি কিনে জঙ্গল পরিষ্কার করেছি। পরে মৎস্য বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ১২ একরজুড়ে একটি মাছের ঘের করি। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ আমাদের সফলতা এনে দেয়। মাছের ঘেরকে কেন্দ্র করে এখানে বেকার যুবকরা কাজের সন্ধান পান। পরে আমরা কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ নিয়ে মাছের ঘেরের সঙ্গেই সবজি ও ফলের বাগান তৈরি করি। এখন আমরা দেশি জাতের গরুর খামারের নতুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। অল্প কিছু গরু আমাদের খামারে রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এখানে অর্ধশত গরু পালন করা হবে। আমাদের সমন্বিত এ খামার থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

খামারের শ্রমিক মাহবুব হাওলাদার বলেন, আগে অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করতাম। এখন এ খামারে কাজ করি। মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পাই। কোনো সময় মাছের ঘেরে, আবার ফলের বাগানে কাজ করি। আমার মতো আরও ১৫-২০ শ্রমিক প্রতিদিন সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন এখানে।

পার্শ্ববর্তী নাঙ্গুলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, এখানের সমন্বিত মৎস্য খামারটি একটি দৃষ্টান্ত। খামারটি দেখে ইতোমধ্যে একটি মাছের ঘের করেছি। ঘেরের পাশে ফল ও সবজির বাগান করার পরিকল্পনা করছি। আশা করি, আমার মতো এলাকার বেকাররা এভাবে পতিত জমিতে মাছের ঘের করে লাভবান হতে পারবেন।

নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, হারুন অর রশীদের মাছের ঘেরের চার পাশে ফল ও সবজির বাগান করার পরামর্শ দিয়েছি। ঝালকাঠিতে এত বড় সমন্বিত খামার আর নেই। খামারের চার পাশের কাশফুলের সৌন্দর্য ও ফলের বাগানের সমাহার দেখতে অনেকেই আসেন এখানে। ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শেখ মো. আবুবকর ছিদ্দিক বলেন, পরিত্যক্ত জমি ফেলে না রেখে এর সদ্ব্যবহার করে মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত ও সবজি বাগান করা উচিত। এতে একদিকে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আয়ের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

 

মো. শাহীন আলম, ঝালকাঠি