আইবিডি বা ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ অন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ। এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে ক্রোনস ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। ক্রোনস ডিজিজ মুখগহ্বর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তবে আলসারেটিভ কোলাইটিস কেবল বৃহদন্ত্রেই হয়।
আইবিডি রোগটির সঠিক কারণ জানা নেই। তবে বলা হয় যে, জেনেটিক ও পরিবেশগত কিছু কারণ এর পেছনে কাজ করে। আইবিডি ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
উপসর্গ: আলসারেটিভ কোলাইটিস হলে দীর্ঘ মেয়াদে রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে। তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে তলপেটে ব্যথা, কোষ্ঠ পরিষ্কার না হওয়ার সমস্যা, মলদ্বারে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
ক্রোনস ডিজিজের উপসর্গ হলো পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি। এছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
জটিলতা হিসেবে খাদ্যনালি সরু হয়ে পেট ফুলে যেতে পারে, খাদ্যনালি ও মলদ্বারে ফিস্টুলা হতে পারে। রোগীর রক্তশূন্যতা, অপুষ্টি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, শরীরে পানি আসতে পারে। আইবিডিতে পরিপাকতন্ত্রের বাইরেও কিছু উপসর্গ যেমন মুখে ঘা, গিরা ফোলা, চোখে ও ত্বকে প্রদাহ ইত্যাদি হতে পারে।
সকালে পানি পানের পর অল্প কিছুক্ষণ অন্য কিছু না খাওয়াই ভালো। এই জল-চিকিৎসার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং এটা পরিপাক ক্রিয়ার জন্য দারুণ উপকারী
রোগ নির্ণয়: রোগের উপসর্গ ও ইতিহাস সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলে কিছু রক্ত পরীক্ষা (রক্তের সিবিসি, ইএসআর, সিআরপি, অ্যালবুমিন), মলের কিছু পরীক্ষা (ক্যালপ্রোটেকটিন), কোলনস্কপি, ইলিওস্কপি, এন্টেরোস্কপি, টিস্যু বায়োপসি পরীক্ষা, বেরিয়াম এক্স-রে, এমআর এন্টারোগ্রাফি ইত্যাদি দরকার হতে পারে। কখনো কখনো সার্জারির পর টিস্যু পরীক্ষা করতে গিয়ে ক্রোনস ডিজিজ ধরা পড়ে।
চিকিৎসা: আইবিডি দীর্ঘমেয়াদি রোগ হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শুরুতেই রোগ নির্ণয় করা গেলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। এর ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা ও জটিলতা কমানোও সম্ভব হয়। আইবিডির আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও ক্ষেত্রবিশেষে ব্যয়বহুল হতে পারে।
অধ্যাপক চঞ্চল কুমার ঘোষ
আইবিডি ক্লিনিক কো-অর্ডিনেটর, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ